মুমতাজ
বলিউড সাম্রাজ্যে সত্তর ও আশির দশকজুড়ে রীতিমতো দাপট ছিল মুমতাজের। এই সুন্দরীর প্রেমে একসময় হাবুডুবু খেতেন সাধারণ মানুষ থেকে বলিউড নায়কেরা। শোনা যায়, শাম্মী কাপুর নাকি তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের অভিনয়জীবনকে জলাঞ্জলি দিয়ে মুমতাজ বিয়ে করতে রাজি হননি। বলিউডের এই প্রাণবন্ত নায়িকা যখন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তখন তিনি পঞ্চাশের দোরগোড়ায়। তবে তিনি ক্যানসারকে পরাজিত করেন। একাধিক কেমোর পরও ভেঙে পড়েননি এই অভিনেত্রী। আজ তাঁর বয়স ৭২। আজও তিনি সমানভাবে উজ্জ্বল।
মনীষা কৈরালা
‘আমি মরতে চাই না’—এক নিদারুণ আকুতি মনীষার কণ্ঠে। একসময় তাঁর এই আকুতি আর্তনাদ হয়ে উঠেছিল। ক্যানসারের সঙ্গে তাঁর এই বেদনাভরা সফরের প্রতিটি কথা মনীষা লিখেছেন হিলড: হাউ ক্যানসার গেভ মি আ নিউ লাইফ বইয়ে। তিনি তাঁর এই বইয়ের শুরুতেই লিখেছেন, ‘আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ডাই।’ হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লড়তে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন জীবন কত সুন্দর। আজ তাই মনীষার জীবনের মূলমন্ত্র, ‘নিজেকে ভালোবাসো। নিজের শরীরকে অবহেলা কোরো না।’ অসংযত জীবনযাপনই তাঁর জীবনে ক্যানসার নিয়ে আসে, এটা মনীষারই ভাষ্য। তখন তিনি ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে। দিনটা ছিল ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর। সেদিনই এই অভিনেত্রী জানতে পারেন তাঁর জরায়ুতে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। ওই বছরেরই ১০ ডিসেম্বর তাঁর শরীরে বড়সড় অস্ত্রোপচার হয়। এরপর শুরু হয় কেমোথেরাপি। আত্মবিশ্বাসের জোরে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন মনীষা। আজ তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত শত শত মানুষের অনুপ্রেরণা।
ইরফান খান
আজও কানে বেজে ওঠে সুতাপার সেই কথাগুলো। ইরফান খানের স্ত্রী সুতাপা প্রথম আলোর এই প্রতিবেদককে তাঁর আন্ধেরির বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসে বলেছিলেন, ‘ইরফানকে ছাড়া আমি হয়তো মরেই যাব।’ তখন ইরফান একদম সুস্থ। ভবিষ্যৎ না জেনেই সে সময় অকপটে কথাগুলো বলেছিলেন তিনি। আজও তাঁরা স্বামী–স্ত্রী কম বন্ধু বেশি। ওই আড্ডার কিছুদিন পর সবখানে খবর ছড়ায় এ দুরারোগ্য অসুখের শিকার ইরফান। পরে নিজেই টুইট করে সে কথা স্বীকার করেন বলিউডের এই অভিনেতা। জানান, তাঁর এই ব্যাধির নাম ‘নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমার’। গত বছর মার্চে ইরফান ইংল্যান্ডে উড়ে যান ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে। যাওয়ার আগে এক টুইটে ইরফান জানান, তিনি অন্ধকারে ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছেন। তবে চিকিৎসা শুরুর পর আবার হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরে পান ইরফান। জয় করেন ক্যানসার। চলতি সপ্তাহেই মুম্বাই বিমানবন্দরে হুইলচেয়ারে দেখা গেছে তাঁকে। তিনি আবার কাজে ফিরেছেন। সদ্যই লন্ডনে আংরেজি মিডিয়াম ছবির শুটিং শেষ করেছেন।
সোনালি বেন্দ্রে
সেদিন সারা রাত সোনালি ঘুমাতে পারেননি। অঝোরে কেঁদেছিলেন। কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না যে তিনিও ক্যানসার নামক মরণব্যাধির শিকার। তবে সোনালির স্বামী গোল্ডি বেহেল তাঁকে সাহস জোগান। তখনই তিনি চোখের জল মুছে নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। গত বছর জুলাই মাসে ধরা পড়ে সোনালি হাইগ্রেড ক্যানসারে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য দ্রুত চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সে সময় পরিবার আর বন্ধুরা তাঁর পাশে ছিলেন সর্বক্ষণ। তাঁদের অনুপ্রেরণা আর সবার ভালোবাসার জোরেই ৪৪ বছর বয়সী এই বলিউড সুন্দরী নিজের সবচেয়ে যন্ত্রণাময় সফর শেষ করে হেসেছেন বিজয়ীর হাসি। ক্যানসারের জটিল চিকিৎসাপ্রক্রিয়ায় ইতি টেনে গত বছর শেষের দিকে দেশে ফিরেছেন সোনালি। তাঁর স্বামী বলিউডের চিত্রপরিচালক গোল্ডি জানিয়েছিলেন, খুব শিগগির পর্দায় দেখা যাবে সোনালিকে।
ঋষি কাপুর
‘আমার সন্তানের মতো হয়ে উঠেছিল ও। আমার ক্ষমতার মধ্যে সবকিছু ওকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ও যেন কোনো কষ্ট না পায়; যা চায়, তা–ই যেন পায়’—একরাশ আবেগ নীতুর কণ্ঠে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ঋষি কাপুরের স্ত্রী নীতু কাপুর এ কথাগুলো বলেন। ঋষি কাপুরের ক্যানসারের চিকিৎসা চলেছে ১১ মাস ১১ দিন। এই সময়ে তাঁর সব যন্ত্রণার সাক্ষী হয়েছেন নীতু। প্রতিটা মুহূর্তে স্বামীকে আগলে রেখেছিলেন। ঋষিও বারবার স্বীকার করেছেন যে নীতু ছাড়া তাঁর জীবন অন্ধকারে ভরা। গত বছর সেপ্টেম্বরে জানা যায় বলিউডের প্রভাবশালী অভিনেতা ঋষি কাপুর ক্যানসারে আক্রান্ত। এরপর চিকিৎসার জন্য তিনি নিউইয়র্কে উড়ে যান। সেখানে টানা চিকিৎসা চলে তাঁর। এই ক্যানসার–যুদ্ধ চলার সময়ই ঋষি তাঁর মা কৃষ্ণা রাজ কাপুরকে হারান। চিকিৎসাপ্রক্রিয়ার কারণে শেষবারের মতো দেখতে পারেননি মায়ের মুখ। এই যন্ত্রণা আজও তাঁকে কুরে কুরে খায়। তবে তিনিও শেষ হাসি হেসেছেন। সম্প্রতি ক্যানসারমুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন ঋষি।
এর আগে লিসা রে, অনুরাগ বাসুও দুরারোগ্য ক্যানসারকে পরাজিত করে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।