টেন্ডার মাফিয়া জি কে শামীম র্যাবের জেরার মুখে তার ব্যবসায়ী
সিন্ডিকেটের ২৮ জনের কথা জানিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়াও শুরু
করেছে গোয়েন্দারা। আবার কাউকে কাউকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এদিকে
গতকাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে
দুই দিনের এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজকে পুনরায় ৫
দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শামীম তার
সিন্ডিকেটের ২৮ জনের নাম বলেছেন। তারা প্রত্যেকে মাসে একবার করে হোটেল
ইন্টার কন্টিনেন্টালে ডিনার পার্টিতে যোগ দিতেন। এ সিন্ডিকেটই সরকারের
বিভিন্ন দফতরের পদোন্নতি ও পদায়নে জোড় তদবিরে যুক্ত ছিলেন। যাদের পদোন্নতি
বাগিয়ে আনা হতো, পরবর্তীতে তাদের দিয়েই বিভিন্ন কাজ হাতিয়ে নেওয়া হতো।
এভাবে সরকারের বিভিন্ন দফতরের জালের মতো করে লোক সেট করে রাখতেন জি কে
শামীম। গত ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারের পর দিন অস্ত্র ও মাদক মামলায় আদালতে
হাজির করা হয় জি কে শামীমকে। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের
জন্য শামীমকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম বেগম
মাহমুদা আক্তার। গতকাল তাকে অষ্টম দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে আবারও
দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার মহানগর হাকিম আশেক ইমাম। এর
আগে দুদিনের রিমান্ড শেষে তেজগাঁও থানা পুলিশ গতকাল পুনরায় ৫ দিনের
রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করে লোকমানকে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে
বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে
রাজধানীর মণিপুরীপাড়ার বাসা থেকে লোকমানকে আটক করে র্যাব-২। এ সময় তার
বাসা থেকে ৬ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। একই দিন কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের
সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজকে অস্ত্র মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের পাঁচ
দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় ধানমন্ডি
থানার মাদক আইনে মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-২ এর উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিন খান ধানমন্ডি
থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে পুনরায়
রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম
তাকে রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
জি কে শামীমের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক : ঠিকাদারির মাফিয়া যুবলীগ নেতা
গোলাম কিবরিয়া শামীমের (জি কে শামীম) সম্পদের ব্যাপারে অনুসন্ধানে মাঠে
নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গতকাল এ বিষয়ে পাঁচ সদস্যের একটি
অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) বিষয়টি নিশ্চিত
করেছেন।
টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। সদস্যরা হলেন
উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী
ও নেয়ামুল আহসান গাজী। দুদকসূত্র জানিয়েছে, গণপূর্ত অধিদফতরে প্রকৌশলীদের
যোগসাজশে শামীমের টেন্ডার বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের
বিষয়টি অনুসন্ধান করবে দুদক টিম। ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনে নিজ
কার্যালয় থেকে শামীমকে সাতজন দেহরক্ষীসহ গ্রেফতার করে র্যাব। ওই সময়
শামীমের কার্যালয় থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের
(এফডিআর) কাগজপত্র, কয়েক হাজার ইউএস ডলার, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদের বোতল জব্দ
করা হয়। গ্রেফতারের পর র্যাব জানায়, জি কে শামীম গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি
ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে তার বিরুদ্ধে
মামলা হয়েছে।