ক্যাসিনো ডন ও টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর থেকেই আলোচনায় তিনি।
গ্রেপ্তার হওয়াদের মুখেও ঘুরে ঘুরে আসছে তার নাম। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী
কর্মকাণ্ড ও অবৈধ ক্যাসিনো বসিয়ে তিনি শ’ শ’ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
র্যাবের অভিযানে সিলগালা করে দেয়া সব কটি ক্যাসিনোর নেপথ্যে ছিলেন ঢাকা
মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার নির্দেশে অভিযান শুরুর পরও নিজের ক্ষমতার দাপট দেখান সম্রাট।
কাকরাইলের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে হাজারো নেতাকর্মীর শোডাউন করেন সেখানে।
তখন থেকেই আলোচনা ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ গ্রেপ্তার হচ্ছেন নাকি তিনি অভিযানের
বাইরে থাকছেন। এখন অবশ্য এই প্রশ্ন আর নেই। তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরেই
আছেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন গুঞ্জনও আছে। ক্ষমতার বলয়ে দীর্ঘ দিনে
সম্রাটের মতো অনেকের উত্থান হয়েছে। কিন্তু এই মূহুর্তে আলোচনার কেন্দ্রে
আছেন সম্রাট। কিন্তু কেন তাকে নিয়ে এতো আলোচনা? দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন,
যুবলীগের নেতা হয়ে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করেন। গড়ে তুলেন তার
নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। এর মাধ্যমে নানাভাবে অবৈধ অর্থ আয় শুরু করেন। বিপুল
এই অর্থ নিজের কব্জায় রাখতে তিনি সখ্য গড়ে তুলেন দলের প্রভাবশালী নেতা ও
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গে। সম্রাট
তাদেরকে নিজের আয়ের অংশের ভাগ দিতেন। তাকে গ্রেপ্তার করলে তার কাছ থেকে
সুবিধা নেয়াদের বিষয়টি প্রকাশ পাবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন এ
কারণে সম্রাটকে গ্রেপ্তার গুরুত্বপূর্ন। এছাড়া যারা তার কাছ থেকে সুবিধা
নিয়েছেন তারাও আছেন নাম প্রকাশ হওয়ার ভয়ে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সূত্রগুলো বলছে, সম্্রাট একটি গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতেই আছেন। তাকে
হেফাজতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্যই তার কাছ
থেকে পাওয়া গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত আসলেই তাকে গ্রেপ্তার
দেখানো হতে পারে। আর এই সংকেত পাওয়া যেতে পারে প্রধানমন্ত্রী দেশে আসার পর।
টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সংগঠনের পদ বাণিজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত
থাকার অভিযোগের পর ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে
ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, লোকমান হোসেন,
শফিকুল আলম ফিরোজের মুখ থেকে বের হয়ে এসেছে সম্্রাটের নাম। এত অভিযোগের
পরও কেন সম্্রাটকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না এ নিয়ে এখন দেশজুড়ে আলোচনা।
অপরাধ
ও রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন, সম্্রাট একা নন। পর্দার আড়ালে আরও অনেক
নায়ক আছেন। যাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগীতায় সম্্রাট আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন
হয়েছেন। সম্্রাট তার অপকর্ম নিয়ন্ত্রণে সরকারের মন্ত্রী, এমপি, সংগঠন ও
সংগঠনের বাইরের প্রভাবশালী নেতা, পুলিশ, কথিত সাংবাদিক নিয়ে বড় সিন্ডিকেট
গড়ে তুলেছিলেন। তাদের কাছে তালিকা করে মাসে মাসে টাকার ভাগ পাঠাতেন।
ইতিমধ্যে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে সব মহলের বড় ধরনের একটি তালিকা পৌঁছেছে।
এই তালিকায় যাদের নাম এসেছে তারাই এখন সম্্রাটকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
তাকে বাঁচাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলে লবিং চলছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি
সংস্থা সম্্রাটকে গ্রেপ্তারের জন্য নজরদারিতে রেখেছিলো। এমনকি
গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু একটি মহল তার গ্রেপ্তার এড়াতে নানা ফন্দি
কষছেন। বোদ্ধারা মনে করছেন সম্্রাটের কাছে এমন তথ্য আছে যেটাতে ফেঁসে
যেতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তি।
সম্্রাটের বাড়ি ফেনির
পশুরামপুরে। সেখানে তার পরিবারের কেউ থাকেন না। তার বাবা সাবেক রাজউক
কর্মকর্তা ফয়েজ আহমদ চৌধুরী মারা গেছেন গত বছরের ডিসেম্বরে। তার মা সাহেরা
খাতুন সম্্রাটের সঙ্গে থাকেন না। তার বড় ভাই ফরিদ উদ্দিন আহমদ বাদল
চৌধুরীর সঙ্গে তিনি ঢাকায় থাকেন। বাদল সম্্রাটের ক্যাসিনো ব্যবসা দেখাশুনা
করতেন। বাদল ছাড়াও সম্্রাটের ছোট আরেক ভাই আছেন। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক
কেন্দ্রীয় কমিটির উপ সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। এদিকে অনেকটা নিস্তব্ধ হয়ে
গেছে ক্যাসিনো ডন সম্্রাটের কাকরাইলের অফিস। যেখানে রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা
নেতাকর্মীদের পদচারণায় ব্যস্ত থাকত। এই অফিস থেকেই সম্্রাট তার সকল
অপকর্মের ছক কষতেন। চাঁদাবাজি, ক্যাসিনোসহ নানা খাত থেকে প্রতি রাতেই টাকা
আসত এই অফিসে। ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগ দক্ষিণের বহিস্কৃত সাংগঠনিক
সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তারের পর থেকেই তিনি আতঙ্কের মধ্যে
ছিলেন।
ওই রাতেই তিনি সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান করেন
কাকরাইলের অফিসে। সেখান থেকেই তিনি বিদেশে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। পরে
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির কারণে সেটি আর সম্ভব হয়নি। দেশের প্রতিটি
বিমানবন্দরে চিঠি দিয়ে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। পরে গ্রেপ্তার
এড়াতে তিনি আশ্রয় নেন সরকারদলীয় এক প্রভাবশালী নেতার বাসায়। এখন ওই নেতার
বাসায়ও তিনি নেই। স্ত্রী নিয়ে সম্্রাট থাকতেন মহাখালী ডিওএইচএসের বাসায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সম্রাট বাসায় যাননি।
সম্্রাটের ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোনে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি কয়েকদিন
ধরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতার সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।