বাংলাদেশ দল টেস্টে খারাপ করলেই কথা হয় ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের
উন্নতি নিয়ে। কিন্তু দিন গড়ালেই সেই চিন্তা হারিয়ে যায়। দেশের টেস্ট দলের
ক্রিকেটারদের বেশির ভাগই নিয়মিত খেলে না প্রথম শ্রেণির চার দিনের ম্যাচে।
এমনকি ঘরোয়াতে সেরা পারফরমারও সুযোগ পায় না টেস্ট দলে। যার দারুণ প্রভাব
আন্তর্জাতিক পারফরম্যান্সে। তাই অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কাছে প্রশ্ন ছিল
টেস্টে ভালো করতে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের এনসিল বা বিসিএল খেলা উচিত?
জবাবে সাকিব বলেন, ‘আমি তো চার পাঁচ বছর খেলিনি, কোনো সমস্যা হয়নি। এখন
বুঝতে হবে ওদের কী সমস্যা হচ্ছে। এখন এনসিএল খেলেই সমস্যা হচ্ছে নাকি না
খেলে সমস্যা হচ্ছে। দুইটারই সমস্যা থাকতে পারে। খেলাও একটা সমস্যা হতে
পারে। ওখানে গেলে এত ইজি বোলিং অ্যাটাক পেয়ে যায়, দুইশ দুইশ করে মারে। চার
পাঁচটা দুইশ মারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চার পাঁচ রান করাও সমস্যা
হয়ে যায়। সো দুইটারই সমস্যা থাকতে পারে। সবার জন্য এক মেডিসিনে কাজ হবে,
এটা বলা ভুল।’ তবে সাকিবের এমন বক্তব্যের সঙ্গে এক মত হতে পারছেন না দেশের
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি ও রানের মালিক তুষার ইমরান।
সাকিবের এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষ করেছেন আফতাব আহমেদ ও শাহরিয়ার
নাফীসও।
টেস্টে ভালো করতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলা কতটা জরুরী
তা নিয়ে তুষার ইমরান বলেন, ‘টেস্টে খেলতে যে ধৈর্য্য প্রয়োজন হয় সেটি
আমাদের দেশের তরুণ ক্রিকেটাররা কোথা থেকে পাবে? অবশ্য চার দিনের ম্যাচ
খেলে। হ্যা, সাকিব অনেক বড় মানের ক্রিকেটার। তার হয়তো প্রয়োজন হয় না। তারা
অনেক বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। কিন্তু যারা নতুন আসছে তারা কি করবে?
ওয়ানডে খেলে আসবে! আরেকটা বিষয় সাকিব বলেছে এখানে দুইশ রান করা সহজ।
চার-পাঁচটা করে করা যায় কারণ বোলিং খারাপ। আমি এটি কোনভাবে বিশ্বাস করি না।
যদি তাই হতো যারা এনসিএল বিসিএল নিয়মিত না খেলে রান না করে জাতীয় দলে
খেলছে তাহলে তারা কতগুলো সেঞ্চুরি করেছে?
বরং আমি মনে করি ঘরোয়া
ক্রিকেটে রান করাই বেশি কঠিন। প্রশ্ন আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যারা
সবচেয়ে বেশি উইকেট পায়, বা রান পায় তাদের কত জন জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছে।
পেলেও তাদের নিয়ে কোনও পরিকল্পনা থাকে না। সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস,
মোহাম্মদ মিঠুন যারা টেস্ট দলে আছে এরা প্রথম শ্রেণিতে কত রান করেছে!
আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমাদের ব্যাটিংয়ের এই অবস্থা কেন!
আফগানদের
বিপক্ষে বাজে পারফরম্যান্স নিয়ে তুষার বলেন, ‘আমিতো বলবো সঠিক পরিকল্পনাই
ছিল না। স্পিন উইকেট বানিয়েছেন তাও আফগানদের বিপক্ষে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে
ব্যাটিং লাইনে এমন কেন পরিবর্তন করা হলো? যারা নিয়মিত চার দিনের ম্যাচ খেলে
তাদের একটা মাইন্ড সেট থাকে।
মোসাদ্দেক খেলে পাঁচে তাকে নামানো
হলো তিনে! মুমিনুলের উপর কি ভরসা রাখা যায়নি? আর টেস্টে ডান হাতি-বাম হাতি
কম্বিনেশন কোনও কাজেই আসে না। আমি বলতে চাইছি টেস্টে পরিকল্পনার জন্যও
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে হয়। আরেকটা বড় কথা হলো যদি সাকিবদের মত
বিশ্বমানের বোলার, তামিমদের মত সেরা ব্যাটসম্যানরা ঘরোয়া প্রথম শ্রেণিতে
খেলতো তাহলে অবশ্য ব্যাটিং-বোলিংয়ের মান বাড়তো। তরুণরাও তাদের কাছ থেকে
শিখতে পারতো। সাকিবদের বোলিংয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করতে পারলে তাদেরও
আত্মবিশ্বাস বাড়তো। সাকিব খেলে না ঠিক আছে কিন্তু তিনি যা বলেছেন তা
তরুণদের জন্য ভুল বার্তাই হতে পারে।’
‘সাকিবরা খেললে মান বাড়বে’- আফতাব আহমেদ
সাকিব
যা বলেছে তা তার নিজস্ব চিন্তা। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে চাই সাকিব দেখেন
চার বা পাঁচ বছর ধরে প্রথম শ্রেণি খেলে না। কিন্তু ওর ক্যারিয়ার ১৩ বছরের।
এর মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ও কিন্তু ১০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। নিজেকে ও
অনেক উপরে নিয়ে গেছে। ওর এখান থেকে কিছু পাওয়ার নেই মানলাম। কিন্তু
অন্যদের প্রয়োজন আছে। দেখেন মুমিনুল হক, এই টেস্টে দলের সেরা ব্যাটসম্যান। ও
কিন্তু নিয়মিত সব এনসিএল, বিসিএলে সব ধরণের ম্যাচ খেলে। সাদমান যে তরুণ
এখন জাতীয় দলে খেলছে ও কিন্তু আমাদের প্রথম শ্রেণিতে খেলেই এই জায়গাতে।
মুশফিকের কথাই ধরেন ও কিন্তু সুযোগ পেলেই চার দিনের ম্যাচ খেলে। হ্যাঁ,
সাকিবের একটি কথাতে আমি একমত যে উইকেট হয়তো মান সম্মত নয় বলে পেসাররা ভাল
করতে পারে না। স্পিনাররা বল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়। ব্যাটসম্যানরা
প্রচুর রান পায়। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে যদি সাকিবদের মতো বোলাররা এখানে
খেলতো তাহলে আমাদের বোলিংয়ের মানটাও বাড়তো। সবচেয়ে বড় কথা হলো ওরা তরুণ আর
নতুনরা ওদের কাছ থেকে কিছু শিখতো। আমি জানিনা ও কেন বা কোন চিন্তা থেকে
বলেছে কিন্তু এটি ভুল বার্তা দিচ্ছে বলেই মনে করি।
সাকিবের ভাবনা অন্যদের জন্য নয়- শাহরিয়ার নাফীস
ওয়ানডে
বা টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেলতে হলে অবশ্যই টেস্টের ‘অ’, ‘আ’, ‘ক’, ‘খ’. শিখে
আসতে হবে। টেস্ট আপনাকে ক্রিকেটের বর্ণমালা শেখাবে। সাকিব প্রথম শ্রেণির
ক্রিকেট খেললে না তার ব্যপার আলাদা। কারণ ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতটা
ব্যস্ত যে খেলার সময় হয় না। ও বিশ্বের সব বড় বড় টুর্নামেন্টে খেলে। আইপিএল,
সিপিএল সব জায়গাতে ওর ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়। কিন্তু অন্যদের? শুধু অনুশীলন
করে কি ক্রিকেট খেলা যায়? তাই অন্যদের কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে শিখতে হয়। আর
আমরা কতগুলো টেস্ট খেলি যে একটি ম্যাচের ভুল অন্য জায়গাতে শুধরাবো। প্রথম
শ্রেণির ক্রিকেটই দেশের অন্যদের ভরসা। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখানেও যারা সেরা
তারা সুযোগ পায় না টেস্ট দলে! আরেকটা বিষয় মুমিনুল কেন দেশের সেরা টেস্ট
ব্যাটসম্যান? তাইজুল নিয়মিত উইকেট পাচ্ছে কারণ কি? কারণ তারা নিয়মিত চার
দিনের ম্যাচ খেলে। আমাদের টেস্ট নিয়ে কোন পরিকল্পনাই নেই। আর সাকিব যেভাবে
ভাবে সেটি অন্যদের জন্য নয়।