নানা বিতর্কের মুখে অবশেষে পদ হারালেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
তাদের জায়গায় নতুন দুইজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গতকাল আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ২০ এবং ২১শে
ডিসেম্বর আওয়ামী লীগর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। গত
কয়েক দিন ধরে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা ধরণের
অভিযোগ নিয়ে আলোচলা চলছিল। সর্বশেষ ৮ই সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের স্থানীয়
সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের কর্মকা-
নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের
কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন।
সর্বশেষ গতকালের বৈঠকে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ
সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়। সভাপতি ও সাধারণ
সম্পাদক পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় সংগঠনের ১ নম্বর সহ-সভাপতি
আল নাহিয়ান খান জয় ও ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের সভায় ছাত্রলীগের প্রসঙ্গটি
এসেছিল। আমাদের নেত্রী বলেছেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বহাল থাকবে।
শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তাদের স্থানে
বর্তমান কমিটির ১ নম্বর সহ-সভাপতি ও ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব
পালন করবেন।
ওবায়দুল কাদের জানান, দলের সব পর্যায়ের সম্মেলন দ্রুত
শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ২০ ও ২১শে ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সম্মেলন
অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, গত বছরের ১১ ও ১২ই মে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই
ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষে ৩১শে জুলাই রেজওয়ানুল
হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্ব পাওয়ার দীর্ঘ
দিন পরও সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হন তারা। সর্বশেষ কমিটি ঘোষণা
করা হলেও এতে বিবাহিত, মাদকের সঙ্গে জড়িত, শৃঙ্খলা বিরোধী অনেককে দায়িত্ব
দেয়ায় নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেয়। পদ বঞ্চিত পক্ষ নতুন কমিটির বিরুদ্ধে
আন্দোলন শুরু করলে চিহ্নিতদের কমিটি থেকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
দায়িত্ব
পাওয়ার পর থেকেই শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে থাকে। বিভিন্ন
গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক রিপোর্ট দেয়া হয়
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। এসব রিপোর্টের সত্যতা পেয়েই প্রধানমন্ত্রী তাদের
ওপর ক্ষুব্ধ হন। ৮ই সেপ্টেম্বরের বৈঠকে তিনি নিজেই ছাত্রলীগের প্রসঙ্গটি
সামনে আনেন। এরপর কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে এ বিষয়ে কথা বলেন। জগন্নাথ
বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
কামাল উপস্থিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে শোভন-রাব্বানীর উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি
তুলে ধরা হয় বৈঠকে।
এছাড়া দুই নেতার দুপুরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস,
নেতাকর্মীদের ফোন না ধরা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে
কমিশন দাবি করার প্রসঙ্গ আলোচনায় আসে। জাবির হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন
প্রকল্পে কমিশন দাবির বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বিশ^বিদ্যালয়ের
ভিসি ফারজানা ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি অবহিত করেন।
এদিকে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে অর্থ লেনদেনের বিষয়টিও
নতুন করে সামনে আসে। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে চিন্তিত ছিলেন
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। করণীয় নিয়ে নিজেরা আলোচনা করলেও
সিদ্ধান্তের জন্য তাকিয়ে ছিলেন দলীয় সভানেত্রীর দিকে। গতকাল দলের বৈঠকে এ
বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসায় নেতাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীরাও খুশি।
তারা প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তৃণমূল আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
এদিকে
কার্য নির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বলেন, নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে গতিশীল রাখতে হবে। নেতাকর্মীদের দেশ ও
জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েছে
উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই আস্থা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের
নেতাকর্মীদের সচেতন থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা বিরোধী
দলে থাকলেও দেশের উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে
দেশে যে দল সংগ্রাম করে, ত্যাগ স্বীকার করে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে,
যাদের আন্দোলনের সংগ্রামের ফলে স্বাধীনতা, সেই দল ক্ষমতায় থাকলে দেশের
উন্নয়ন হয়। আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যারা ক্ষমতায় আসে তারা নিজেদের
ক্ষমতা নিশ্চিত করে নিজেদের ভাগ্য গড়ার কাজে ব্যস্ত থাকে। শেখ হাসিনা বলেন,
আওয়ামী লীগ জনগণের দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশকে
এগিয়ে নিতে, দেশ ও জাতির কল্যাণে সব সময়ই সংগঠনটি নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ
করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশ যা অর্জন
করেছে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। এখন বাংলাদেশ নিয়ে
সারাবিশ্বের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশ যেভাবে এগিয়ে
যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি
সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে। এগিয়ে যাওয়ার পথে নানা বাধা আসে বলে
মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো রয়েছেই, মনুষ্যসৃষ্ট
দুর্যোগও রয়েছে। দেশে জঙ্গিবাদ, অগ্নিসন্ত্রাস করার অপচেষ্টা হয়েছিল,
সরকার তা কঠোর হাতে দমন করেছে। আগামীতেও এই মনোভাব অব্যাহত থাকবে। একইভাবে
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত
থাকবে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সফলতা ও পদক্ষেপগুলো তুলে
ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এর সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে এবং তৃণমূল পর্যায়ের
মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম হয়েছি।
আমাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে
হবে। সে লক্ষ্যে সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে উল্লেখ করে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা
বিরোধী দল বা সরকারে থাকুক, আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা কী হবে, দেশের
মানুষের জন্য কী করবো, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কী করবো, সে বিষয়ে সেই
পরিকল্পনা সবসময় আগে থেকে নিয়ে থাকে এবং যখনই সরকারে আসে তখন তা বাস্তবায়ন
করে।
আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান
জানিয়ে দলীয় সভাপতি আরও বলেন, শুধু নিজে কী পেলাম, সেটা না ভেবে দেশ ও
জাতিকে কী দিতে পারলাম, সেটাই বড় কথা। সবাই যার যার জায়গা থেকে নিষ্ঠার
সঙ্গে কাজ করলে দ্রুতই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবো, জাতির পিতার স্বপ্নের
সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারবো।
জাবির ঘটনায় কপাল পুড়লো শোভন-রাব্বানীর:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন দাবি করার ঘটনায়ই মুলত
কপাল পড়েছে শোভন-রাব্বানীর। তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও এ কমিশন
দাবির ঘটনাটি বেশি আলোচিত হয়। বিষয়টি বিশ^বিদ্যালয় ভিসি সরাসরি
প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ শুরুর আগেই
সমঝোতা হিসেবে ছাত্রলীগ নেতাদের দুই কোটি টাকা দেয়ার অভিযোগ উঠে ভিসি
অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রকাশের পর এর বিরুদ্ধে
ক্যাম্পাসে শুরু হয় আন্দোলন। তখনও জানা ছিল না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি
ও সেক্রেটারির চাঁদা নিয়ে দেনদরবারের বিষয়টি। অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে
কোণঠাসা অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এই তথ্য প্রকাশ করে নতুন আলোচনার জন্ম দেন।
তিনি দাবি করেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উন্নয়ন কাজে ‘পার্সেন্টেজ’
দাবি করে তার সঙ্গে দেন-দরবার করে ব্যর্থ হন। তিনি অসুস্থ অবস্থায়
হাসপাতালে থাকা অবস্থায়ও ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার ওপর চাপ
প্রয়োগ করেন। অধ্যাপক ফারজানা ছাত্রলীগ নেতাদের ‘পার্সেন্টেজ’ দাবির বিষয়টি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অবহিত করেছেন। এরপরই ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ
সম্পাদকের গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস বাতিল করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে
দফায় দফায় চেষ্টা করেও দুই নেতা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে ব্যর্থ হন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লেখেন তারা। ওই চিঠিতে জাবি ভিসির
বিরুদ্ধে তারা গুরুতর অভিযোগ করেন। ভিসির স্বামী ও পুত্র অর্থ লেনদেনে জড়িত
বলেও দাবি করা হয় চিঠিতে। ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ
সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর খোলা চিঠিতে অভিযোগ তুলার পর ভিসি ফারজানা হক
গণমাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পে ‘পার্সেন্টেজ’ দাবির বিষয়টি প্রকাশ করেন। তিনি
দাবি করেছেন ছাত্রলীগকে কোনো টাকা দেননি তিনি। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি
বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে তিনি বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে অনুরোধ করবেন।
তদন্তেই সবকিছু পরিষ্কার হবে।
জাবির অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে শাখা
ছাত্রলীগকে ভিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ কোটি টাকা দিয়েছেন বলে খবর
প্রকাশের পর উত্তাল হয়ে উঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ‘দুর্নীতির
বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তিনদফা দাবিতে
আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের
বৈঠকে ২ দফা নিয়ে সমঝোতা হলেও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত দাবি করেন তারা।
কিন্তু এরই মধ্যে ভিসি গণমাধ্যমকে বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ
নেতৃবৃন্দ তার কাছে চাঁদা দাবি করেছিল। তিনি মানবজমিনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ
সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার বান্ধবীকে দিয়ে চাঁদার জন্য ফোন দিতেন।
শোভন-রাব্বানী আমার বাসায় এসেও চাঁদা দাবি করেছে। এখনকার দিনে ১-২ % এর
আলাপ কোথাও নেই। ৪%-৬%-এর নিচে কাজ হয় না। দেশে যে সমস্ত কাজ হচ্ছে
ছাত্রলীগ শেয়ার পাচ্ছে। এটা আমাদের অনুমতি আছে। আমি বলেছি এত টাকা চলে গেলে
ভবন হবে কীভাবে। আমি তোমাদের কোনো টাকা দিতে পারব না। এর আগে আমি
হাসপাতালে থাকাকালে গিয়ে আমার কাছে ২-৩ টি টেন্ডার শিডিউল দাবি করেছেন।’
ভিসির এ বক্তব্যের বিপরীতে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন,
ভিসি ম্যাডাম ঈদের আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা
দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন ভিসির স্বামী ও
সন্তান কমিশন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এই কমিশন বাণিজ্যের সঙ্গে তারা শাখা
ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছেন। গোলাম রাব্বানী গণমাধ্যমকে আরো বলেন, জাবি
ছাত্রলীগ আমাদের জানিয়েছেন ভিসি ম্যাডাম তাদের টাকা দিয়েছেন। পরে আমি আর
শোভন দেখা করে বলি, আপনি শাখা ছাত্রলীগকে টাকা দিয়েছেন তাহলে আমাদের
ন্যায্য পাওনা কই? আমাদের ঈদ বোনাস কই?
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে
ভিসি ফারজানা ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমি তাদের কোনো ধরনের টাকা দেইনি। এসব
তারা ক্ষুব্ধতা ও হতাশা থেকে গল্প বানাচ্ছে। আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে
দিলাম। এ বিষয়ে আমি তদন্ত করতে বলবো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে, মাননীয়
আচার্যকে। আমি যাব তাদের কাছে। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
ভিসির পদত্যাগ দাবি:
এদিকে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিসিকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ ও ‘অর্থলোলুপ’
আখ্যায়িত করে ভিসির স্বপদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই বলে পদত্যাগ দাবি করেছেন
জাবি’র বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল
শিক্ষক সমাজ। ভিসিবিরোধী বলে পরিচিত আওয়ামীপন্থি এই শিক্ষক সংগঠন থেকে
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনৈতিক আর্থিক
লেনদেনে ভিসি ও তার পরিবারের জড়িত থাকার বিষয়টি দিবালোকের মতো পরিষ্কার। এই
ঘটনায় ভিসি কেবল নিজেকেই কলঙ্কিত করেননি, সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের
মান-মর্যাদাকেও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। এ ছাড়া ভিসি ও তার পরিবার
দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ভিসি তদানীন্তন সময় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের
নিয়ে রুচিবহির্ভূত ও কা-জ্ঞানহীন মন্তব্য করেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
‘জগন্নাথের নতুন ক্যাম্পাসে বালু ভরাটে টাকা চেয়েছিলেন রাব্বানী’
এদিকে
আমাদের জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, জবি ছাত্রলীগের কমিটি
টিকিয়ে রাখতে মাসোহারা (মাস প্রতি টাকা) ও কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমিতে নতুন
ক্যাম্পাসের জায়গা উন্নয়নে ঠিকাদার পাঠিয়ে ঘনফুট প্রতি বালু ভরাটের জন্য
টাকা চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর
বিরুদ্ধে। অভিযোগ তুলেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের সদ্য
সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল।
যদিও রাব্বানী এই অভিযোগ
প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার দাবি, অদৃশ্য সিন্ডিকেটের পরামর্শে তার বিরুদ্ধে
ভিত্তিহীন এই অভিযোগ করা হয়েছে। গত ৩রা ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সম্পাদক শেখ রাসেলের সমর্থকদের সংঘর্ষের
পর ওই দিনই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ১৯শে
ফেব্রুয়ারি বিলুপ্ত করা হয় ওই কমিটি। গত শুক্রবার শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল
এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ওই কমিটি টিকিয়ে রাখার বিনিময়ে তার কাছে
মাসভিত্তিক টাকা চেয়েছিলেন রাব্বানী। কেরানীগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নতুন
ক্যাম্পাসের জায়গা উন্নয়নের বালু ভরাটের কাজের জন্য ঠিকাদার পাঠিয়েছিলেন
রাব্বানী এবং প্রতি ঘনফুট হিসেবে টাকা দাবি করেছিলেন। রাসেল বলেন, সংঘর্ষের
পর সভাপতি তরিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করতে
রাব্বানীকে অনুরোধ করেছিলেন।
তখন রাব্বানী বলছিলেন, এর আগে সোহাগ
ভাই-নাজমুল ভাই ছিল, তাদের বিভিন্নভাবে সুবিধা দিতো জবি ছাত্রলীগের
শরীফ-সিরাজ (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সম্পাদক)
কমিটি। তোরা তো আমাকে কিছু দিস না। তোরা মাসে কত দিতে পারবি বল, তাহলে দেখি
কমিটি ঠিক করা যায় কীভাবে। ওই শর্তে রাজি হননি বলে তাদের কমিটি বিলুপ্ত
করা হয়েছে বলে দাবি করেন রাসেল। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম
রাব্বানী বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে
মারামারিতে ২০-২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছিল। এই ঘটনায় তিন সাংবাদিকও আহত
হয়েছিল। এ ছাড়া জগন্নাথ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নানা অপকর্মে
লিপ্ত হওয়ার খবর পেয়ে প্রথমে আমরা কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করি। পরে
সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটি বিলুপ্ত করি। রাব্বানী বলেন,
জগন্নাথের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কমিটি বাঁচানোর বিষয়ে কথা বলার
প্রশ্নই উঠে না। অনেক তদবির করে কমিটি টিকিয়ে না রাখতে পেরে আমাদের
বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।