বাংলাদেশে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)-কে প্রতি বছর
কমবেশি ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো সহায়তা দেয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও দাতা
সংস্থা। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। বিপুল এই অনুদানের
টাকা কোথায়, কীভাবে খরচ হচ্ছে- সঠিক তথ্য পাচ্ছে না সরকার। আন্তর্জাতিক
রীতি অনুযায়ী, যে দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী এনজিওকে সহায়তা করা হবে, সেই
দেশের সরকারকে অর্থায়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করবে অর্থদাতা রাষ্ট্র ও
সংস্থা। বাংলাদেশের বেলায় এই বিধানটি খুব কম ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে। দাতা
রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলো কেন অর্থ দিচ্ছে তা জানাচ্ছে না। জঙ্গি অর্থায়ন ও
রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিবেচনায় নিয়ে এনজিওগুলোর বিদেশি তহবিলপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে
এই তথ্য গোপনীয়তার বিষয়টি নিয়ে এখন এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সরকারের
মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী
কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে- এনজিওগুলো বছরে যে ৩৫০ মিলিয়ন
ডলার ব্যয় করছে এই টাকাপ্রাপ্তি ও ব্যয় সম্পর্কিত কোনো রেকর্ড আছে কি-না
(সরকারের কাছে)? কমিটির গত ২৮ জুলাইয়ের সভায় এ প্রশ্ন তোলেন মো. আবদুস শহীদ
এমপি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে তারা (এনজিও) জড়িত হয়নি,
হচ্ছে না বা হবে না, তা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তার কোনো সুযোগ
আছে কি-না, তা জানা দরকার। জবাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার
আহমেদ জানান, বৈদেশিক সাহায্যের কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে প্যারিস ঘোষণা
হয়েছিল। সেখানে বৈদেশিক সহায়তাদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবহিত করা
ব্যতিরেকে বা তথ্য প্রদান ছাড়া দাতা গোষ্ঠী বা সংস্থা অর্থছাড় করতে পারে
না। তবে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী বাধ্যতামূলক শর্ত থাকা সত্ত্বেও দেশ বা
সংস্থা অনেক ক্ষেত্রেই তা মানছে না।
সভায় সচিব অবশ্য জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এ বিষয়ে আইন পাস হওয়ায়
এনজিওগুলোর তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়া শুরু হয়েছে এবং কিছু তথ্য আসতে শুরু
করেছে। জানতে চাইলে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আবদুস সালাম
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম)
রেগুলেশন আইন ২০১৬’ অনুযায়ী এনজিওবিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত সব এনজিওকে এই
ব্যুরোর মাধ্যমে বিদেশি অনুদান সংগ্রহ করতে হয়। তবে সেই অনুদান ছাড়ের আগে
সরকারকে তথ্য দেওয়ার বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক
বাধ্যবাধকতার বিষয়টি সম্পর্কে এই কর্মকর্তা ওয়াকিবহাল নন বলে জানান।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত দেশি-বিদেশি
মিলিয়ে ২ হাজার ৪৮৪টি এনজিও নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি এনজিওর সংখ্যা
২৫৪টি। নানা অনিয়মের অভিযোগে এ পর্যন্ত ৬৭৯টি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা
হয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বেশকিছু এনজিও কাজ করছে যাদের
কোনো নিবন্ধন নেই। এদের অর্থায়ন সম্পর্কেও জ্ঞাত নয় সরকার। ইআরডি
কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি সংস্থাগুলো বৈদেশিক সহায়তার অর্থ এনজিও
ব্যুরোর মাধ্যমে এনে থাকলেও বৈদেশিক সহায়তা এনে অনেক এনজিও প্রতিষ্ঠান তা
সঠিকভাবে ব্যবহার করছে না। এমনকি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বিদেশি
রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থা যে অনুদান দিচ্ছে সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়েও
প্রশ্ন উঠেছে। রোহিঙ্গাদের তুলনায় এনজিও কর্মকর্তাদের ভোগ-বিলাসে অনুদানের
একটি বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিবন্ধিত সব বেসরকারি সংস্থাকে এনজিওবিষয়ক
ব্যুরোর মাধ্যমে বিদেশি অনুদান আনতে হয়। এ বিষয়ে আইনও আছে আমাদের দেশে। তবে
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দাতা রাষ্ট্রগুলো এ দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী
এনজিওগুলোর তহবিলে অর্থছাড় করার আগে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে
কি-না এ বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর সাবেক এই মহাপরিচালক মনে
করেন বাংলাদেশে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর তহবিলে অর্থছাড়ের স্বচ্ছতার
জন্যই বিদেশি রাষ্ট্র ও দাতাসংস্থাগুলোর উচিত প্রয়োজনীয় তথ্য সরকারকে
দেওয়া, যাতে করে ওই অর্থের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সরকার নিশ্চিত হতে পারে।