আজ থেকে কয়েক বছর আগেও থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের আনাচকানাচ ছিল
জুয়ার আসরে ভরপুর। ক্যাসিনোর আড়ালে চলত অবৈধ জুয়া ব্যবসা। এ নিয়ে বিব্রত
ছিল সরকারও। থাইল্যান্ডের স্থানীয়দের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরা এই নগরীতে
এসে ক্যাসিনোতে খেলতেন। কিন্তু থাই সরকার ও সেনাবাহিনীর কঠোর মনোভাবে
ব্যাংকক থেকে সব ধরনের জুয়া তুলে দেওয়া হয়েছে। ক্যাসিনো এখন উধাও।
রাজধানীতে ক্যাসিনো ব্যবসা নেই বললেই চলে। ব্যাংককের বাইরে কিছু এলাকায়
গোপনে ক্যাসিনো ব্যবসার খবর পাওয়া গেলেও তা চলছে কঠোর গোপনীয়তায়। ব্যাংককে
বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ক্যাসিনো বা সব ধরনের জুয়ার ব্যাপারে সরকার ও দেশটির
সেনাবাহিনী জিরো টলারেন্স অবস্থানে। তবে রাজধানী ব্যাংককে সরকার বৈধভাবে
বার, নাইট ক্লাব ও ট্র্যাডিশনাল ম্যাসাজ সেন্টারের লাইসেন্স দিয়েছে। বিদেশি
পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই এ ব্যবস্থাকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে
থাইল্যান্ডের সমুদ্রসৈকত নগরী পাতায়া, ফুকেটসহ পর্যটন এলাকাগুলোতেও সরকার
বার, নাইট ক্লাব ও ম্যাসাজ সেন্টার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। দেশটির আয়ের বড়
অংশই আসে পর্যটন খাত থেকে।
জানা গেছে, থাই সরকার নতুন করে তাদের ইমেজ বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। কোনো
অনৈতিক কাজ তারা প্রশ্রয় দিতে চায় না। এখানে এক সময় হাত বাড়ালেই নারীদের
সঙ্গ পাওয়া যেত। ছিল ক্যাসিনোর রমরমা বাণিজ্য। কিন্তু এখন সবকিছুই
নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকা ছাড়া দেহ
পসারিণীদের তেমন একটা দেখা যায় না। ক্যাসিনো উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বারগুলোও
সব লাইসেন্সকৃত। নাইট ক্লাবগুলোও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বক্ষণিক
পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, গত বছর ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য সান ও দ্য
ডেইলি মিররের নিবন্ধে থাইল্যান্ডে বিনোদনের আড়ালে যৌন ব্যবসা নিয়ে ব্যাপক
সমালোচনা করা হয়। এতে থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা, বিশেষ করে সরকার খুবই
ক্ষিপ্ত হয়। সরকার অবৈধ সব ব্যবসা বন্ধেরও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। এর পর
থেকেই সরকার জনপ্রিয় পর্যটক এলাকাগুলোকে নিয়ন্ত্রিত ও অপরাধমুক্ত রাখার
জন্য অভিযান শুরু করে, যে প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে। এখানে একজন পর্যটক
রাতভর একা চলাচল করলেও নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন না। ইরামমা মাতাম টিকি
নামে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্রী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘থাইল্যান্ড
একটি অতিথিপরায়ণ দেশ। এ দেশে কোনো নতুন অতিথি প্রবেশ করামাত্র তাকে ফুল
দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। অতিথিদের অবাধ বিচরণের সুযোগ রয়েছে এখানে। তারা
যাতে কোনো ধরনের প্রতারণার শিকার না হন সে ব্যাপারে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই
সজাগ।’ জাহাঙ্গীর আলম নামে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ব্যাংককে থাকেন অন্তত ২০
বছর ধরে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্যাংককে এক সময় জুয়া বা
ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসা হতো। কিন্তু থাই সরকার জুয়ার ব্যাপারে কঠোর মনোভাব
পোষণ করেছে। তাই ক্যাসিনো দেখামাত্র তা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সংশ্লিষ্টদের
বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। থাই সরকার চায় মূল ধারায়
ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। কাউকে ঠকিয়ে নয়।’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পৃথিবীর
ব্যস্ততম শহরগুলোর মধ্যে ব্যাংকক একটি। এখানে পর্যটকরা শুধু ঘুরতেই আসেন
না, উন্নত চিকিৎসাসেবাও পান। এখানকার খাবারের ব্যবস্থাও ভালো। দেশীয়
সুস্বাদু ফলমূল ছাড়াও সামুদ্রিক মাছ পর্যটকদের পছন্দের তালিকায়। অসংখ্য
সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে এই শহরে। আকাশচুম্বী আধুনিক
স্থাপত্য, দৃষ্টিনন্দন আর্ট গ্যালারি ও জাদুঘর তো আছেই। বড় বড় শপিং মল
ছাড়াও এখানে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ভাসমান বাজার। খাবার ব্যবস্থাতেও রয়েছে
ব্যাপক বৈচিত্র্য। বিলাসবহুল রেস্তোরাঁর পাশাপাশি পাওয়া যায় স্ট্রিট ফুড।
দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাতের ব্যাংকক থাকে বিনোদনে ঝলমল। নাইট ক্লাব,
লাইভ মিউজিক, ককটেইল বার, রুফটপ বার, মুয়া থাই ফাইটস নামের রেসলিং ক্লাবসহ
আরও নানা কিছু তো রয়েছেই। শহরের পরিবহন ব্যবস্থাও চমৎকার। বিটিএস স্কাই
ট্রেন, এমআরটি পাতাল ট্রেন, অসংখ্য বাস ও ট্যাক্সি রয়েছে এখানে। যে কোনো
ধরনের বাজেটেই একজন পর্যটক থাকার সুব্যবস্থা পেয়ে থাকেন ব্যাংককে। এবাদুল
হক নামে একজন বাংলাদেশি গাড়িচালক বলেন, ‘ব্যাংককে এখন কোথাও ক্যাসিনো
ব্যবসা খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাজধানীর বাইরে কিছু থাকতে পারে। তাও গোপনে।
সরকার বা দেশটির সেনাবাহিনী খবর পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।’