শিশু তুহিনকে ঘুমন্ত অবস্থায় তার বাবা আবদুল বাছির রাতের অন্ধকারে ঘর
থেকে বের করে নিয়ে যান। এরপর তার বাবা, তার আরেক চাচা ও এক চাচাতো ভাই মিলে
তাকে হত্যা করেন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার
মো. মিজানুর রহমান নিজ কার্যালয়ের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
পুলিশ
সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীতে শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান বাবার
কোল। কিন্তু তুহিনকে বাবার কোলেই হত্যা করা হয়েছে। পরে তার শরীরের বিভিন্ন
অঙ্গ কেটে ফেলা হয়। এরপর পেটে দুটি ছুরি ঢুকিয়ে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা
হয়।’ আবদুল বাছিরের সঙ্গে তার ভাই নাসির মিয়া ও ভাতিজা শাহরিয়ার ছিলেন বলে
জানান তিনি।
এর আগে বিকেলে পুলিশ তুহিনের বাবা আবদুল বাছির (৪০), চাচা আবদুল মছব্বির
(৪৫) ও প্রতিবেশী জমসের আলীকে (৫০) তিনজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। একই
সময় আদালতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তুহিনের আরেক চাচা নাসির
উদ্দিন (৩৪) ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার (১৭)। এই পাঁচজন সোমবার দুপুরে থেকে
পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
পুলিশ তুহিনের মা মনিরা বেগমের করা মামলায় আবদুল বাছির, আবদুল মছব্বির ও
জামসের আলীকে বিকেলে সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের হাজির করে
প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড নেওয়ার আবেদন করা হয় । আদালতের বিচারক
শ্যাম কান্ত সিনহা প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই সময়
সুনামগঞ্জের বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. খালেদ মিয়ার আদালতে
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তুহিনের চাচা নাসির মিয়া ও শাহরিয়ার।
নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশু তুহিন মিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই
উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামে। রোববার রাতে ওই হত্যাকাণ্ড হয়।
সোমবার সকলে পুলিশ গিয়ে শিশু তুহিনের লাশ উদ্ধার করে। কদমগাছের ডালে ঝুলছিল
তুহিনের রক্তাক্ত নিথর দেহ। গলায় রশি বাঁধা ছিল। পেটে ঢোকানো দুটি লম্বা
ছুরি। বর্বরতার এখানেই শেষ নয়, তার দুটি কানও কেটে ফেলা হয়েছে।
এরপর সোমবার রাতে এ ঘটনায় তুহিনের মা মনিরা বেগম অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনের
বিরুদ্ধে দিরাই থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ মামলায় এ পর্যন্ত পুলিশ
পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে সোমবার দুপুরে তুহিনের বাবা আবদুল বাছির সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন,
তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে তুহিন দ্বিতীয়। ১৫ দিন আগে তাঁদের এক
কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে। রোববার রাতে খেয়েদেয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে
পড়েন তাঁরা। রাত আড়াইটার দিকে তাঁর এক ভাতিজি ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে
তাঁদের ঘরের দরজা খোলা। এরপর সবাই জেগে ওঠে দেখেন তুহিন নেই। তখন
প্রতিবেশীদেরও ডেকে তোলা হয়। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। এক পর্যায়ে বাড়ির পাশে
রাস্তায় একটি কদমগাছের ডালে তুহিনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তাঁরা।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমাদের কাছে বিষয়টি
পরিষ্কার। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এর সামনে পেছনে–যারাই
আছে, সবাই ধরা পড়বে। কেউ ছাড় পাবে না। খুব দ্রুত এই মামলায় পুলিশ আদালতে
প্রতিবেদন দেবে।’