শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের গ্রেফতার নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে পলাতক এই সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে বলে
খবর রটেছে। দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমেও এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে জিসানের
গ্রেফতার নিয়ে দু'ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) গ্রেফতারের খবরটিকে সত্য বলে জানিয়েছে।
এআইজি মহিউল ইসলাম শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জিসান দুবাইয়ে
গ্রেফতার হয়েছেন বলে দুবাই এনসিবি থেকে তাদের জানানো হয়েছে। জিসান এখন
আইনের হেফাজতে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
কবে গ্রেফতার হয়েছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটি আমাদের জানা নেই। গত
মাসের ২৫ তারিখে দুবাই থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাই। ঢাকা থেকে যোগাযোগ করা
হচ্ছে।
দুবাইয়ে জিসানের ঘনিষ্ঠজনের বরাত দিয়ে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র
জানিয়েছে, জিসান আদৌ গ্রেফতার হননি। তিনি আগেই নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।
পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি এখন বেশ ভাল সময় কাটাচ্ছেন।
কে এই জিসান?
জিসানের পুরো নাম জিসান আহমেদ মন্টি। তিনি ১৯৭০ সালে রাজধানী ঢাকার খিলগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
রাজধানীর গুলশান, বনানী, পল্টন, মগবাজার-মালিবাগ, ফকিরাপুল, মতিঝিল
এলাকায় দাবিয়ে বেড়াতেন জিসান। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো ব্যবসা, মাদক
ব্যবসা সবই করতেন তিনি।
একসময় ঢাকায় এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী বাহিনীও গড়ে উঠেছিল তার। যাদের নাম
শুনলে ভয়ে তটস্ত থাকত সবাই। দিনে-দুপুরে তারা চাঁদা চেয়ে চিরকুট পাঠাতো।
সঙ্গে পাঠাতো কাফনের কাপড়। অনেকেই নীরবে দাবিকৃত সেই চাঁদা দিয়ে দিত। না
দিলে জীবন দিতে হতো।
সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দুই যুবলীগ নেতা জিকে শামীম ও খালেদ
মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটকের পর তার (জিসানের) নাম ফের নতুন করে আলোচনায় আসে।
তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, জিসানের একটি ভারতীয় পাসপোর্ট ছিল। সেখানে তার নাম বলা হয়েছে আলী আকবর চৌধুরী।
সূত্র জানায়, ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঠিকানা দেখানো হয়েছে সারদা পল্লী,
ঘানাইলা, মালুগ্রাম শিলচর, চাষার, আসাম। বাবার নাম হাবিবুর রহমান চৌধুরী।
মায়ের নাম শাফিতুন্নেছা চৌধুরী। আর স্ত্রীর নামের স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে
রিনাজ বেগম চৌধুরী। পাসপোর্ট ইস্যুর স্থান দুবাই হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
দেখা গেছে, ২০০৯ সালের ৭ জুন প্রদান করা পাসপোর্টটির মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২০১৯ সালের ৬ জুন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের খবর, চলতি বছরের ৬ জুন পাসপোর্টটির মেয়াদ
ফুরিয়ে যাওয়ার পর ফের ভারতীয় পাসপোর্টটি ১০ বছর মেয়াদের নবায়ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুবাইয়ে শীর্ষসন্ত্রাসী জিসানের দুটি
রেস্টুরেন্ট আছে; আছে গাড়ির ব্যবসাও। এসব দেখভাল করেন তার ছোট ভাই শামীম
এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাকিল মাজহার। এর মধ্যে শাকিল মাজহার যুবলীগ
ঢাকা দক্ষিণের সহসম্পাদক রাজিব হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এ হত্যাকাণ্ডের
পর পালিয়ে দুবাই চলে যান তিনি।