পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ ফার্স্ট লেডি এক রাতে স্বপ্ন দেখলেন। স্বপন আর
ভবিষ্যৎ নিয়েই বুশরা মানেকার কারবার। তিনি একজন নারী পীর। ভক্তরা তাঁকে
ডাকেন পিঙ্কি পীরনি নামে। নিজ শহর লাহোরের বাইরেও তাঁর অনেক অনুসারী। ২০১৫
সালে মানেকা যাঁকে স্বপ্নে দেখেছিলেন তিনিও তাঁর ভক্তদের দলে শামিল হলেন।
সেই ভক্তের নাম ইমরান খান—কিংবদন্তি ক্রিকেট খেলোয়াড়। ইমরান খান তাঁর
আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ
তাঁদের অনুসরণ করে, ধর্মীয় থেকে নিত্যদিনের জীবনের সমস্যা নিয়ে তাঁদের কাছে
পরামর্শ চায়।’
ক্রিকেটের পৌরাণিক বীর
ইমরান খানের জন্ম লাহোরের এক
অভিজাত পরিবারে, ১৯৫২ সালে। ১৯৭০–এর দশকের শেষ ভাগে তাঁর ক্রিকেট–জীবন
শুরু। ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতায় অধিনায়কত্ব করে তিনি
প্রায় পৌরাণিক চরিত্রে পরিণত হয়েছিলেন। ‘ভদ্রলোকের খেলা’ ক্রিকেটে লম্বা
চুল, আর বুকখোলা গেঞ্জিতে নায়কোচিতভাবে ইমরান খানের প্রবেশ। খেলা, আবেদন আর
রাজনীতিকে একসঙ্গে মিশেল করে তিনি তাঁর প্রজন্মের আইকন হয়েছিলেন। তাঁর
জীবনীকার ক্রিস্টোফার স্যান্ডফোর্ড লিখেছেন, ‘ভক্ত–অনুসারী তৈরিতে ইমরান
হয়তো প্রথম নন। কিন্তু পুরুষনির্ভর আর গোমড়ামুখো একটা খেলাকে তিনি প্রায়
একা আবেদনময় করে তুলেছিলেন।’
অত্যন্ত সুদর্শন আর অক্সফোর্ডে পড়া—তৃতীয় শ্রেণির ডিগ্রি পাওয়া
হলেও—ইমরান খানের সামনে ব্রিটিশ অভিজাত সমাজের দরজা সহজেই খুলে গিয়েছিল।
বর্তমানে কর্নওয়েলের ডাচেস ক্যামিলা পার্কারের ভাই মার্ক শ্যান্ড ছিলেন
ইমরানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নারীদের মাঝে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল প্রবল। ইমরানের এক
ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইউসুফ সালাহউদ্দিন বলেছিলেন, ‘৬ থেকে ৬৬ বছর বয়সী মেয়েদের আমি
তাঁর জন্য পাগল হতে দেখেছি।’ যা–ই হোক, ১৯৯৫ সালে ৪৩ বছর বয়সে তিনি
বিলিয়নিয়ার জিমি গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমাইমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন।
১৯৯০–এর মাঝামাঝি খানের সৌভাগ্যের সূর্যে মেঘের চিহ্ন ছিল না। বিশ্বকাপ
জিতেছেন, মহা ধনাঢ্য সুন্দরীকে বিয়ে করেছেন, মায়ের স্মরণে ক্যানসার
হাসপাতাল গড়েছেন। এত সব অর্জনের মধ্যে পাকিস্তানের এক ছোট শহরের এক নারী
পীরের ভবিষ্যদ্বাণী তাঁকে আর কী দিতে পারত? উত্তরটা ছোট্ট করে দিলে বলতে
হয়: রাজনীতি।
নায়কের অতৃপ্ত হৃদয়
অনেক প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ,
সামরিক বাহিনীর বড় কর্তারা তাঁকে নিজের কাছে টানার চেষ্টা করছিলেন। শেষ
পর্যন্ত ইমরান খান ১৯৯৬ সালে নিজের দল বানালেন। নাম দিলেন তেহরিক ই ইনসাফ,
মানে ন্যায্যতার জন্য আন্দোলন, যা পিটিআই নামে পরিচিত। প্রথম নির্বাচনে
পার্টি কোনো আসন পেল না। পরের নির্বাচনে জিতলেন শুধু নিজের আসনে। ২০১৩ সালে
তাঁর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, তখনো পিটিআই জিতল মাত্র ৩৫ আসন। ২০
বছর ধরে তিনি বন্ধুদের বলতেন, ‘সামনেরবার দেশে এলে দেখবে আমি
প্রধানমন্ত্রী।’ চারটা নির্বাচন গেল, দুটো বিয়ে ভাঙল কিন্তু প্রধানমন্ত্রী
হওয়ার আশা অধরাই রয়ে গেল।
ঠিক এই সময়ই বুশরা মানেকা তাঁর স্বপ্ন দেখলেন।
ইমরান খান এই সময় মরিয়া হয়ে পিঙ্কি পীরের আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা চাইতে
থাকেন। এর পরের অংশ এক পরাবাস্তব গল্প হয়ে পাকিস্তানিদের মুখে মুখে ফিরছে।
মানেকা এই সব গল্প অস্বীকার করলেও লোকের মুখ আটকায় কে! মানেকার স্বপ্নে এক
কণ্ঠস্বর বলেছিল, ইমরান খান যদি প্রধানমন্ত্রী হতে চান তাহলে তাঁকে সঠিক
নারীটিকে বিয়ে করতে হবে। সঠিক নারী মানে মানেকার পরিবারের কেউ। এই গল্পের
অন্য সংস্করণ বলছে যে বিয়ের জন্য মানেকা প্রথমে তাঁর ছোট বোনের কথা বলেন।
আরেক গল্প বলছে, তাঁর আপন মেয়ের কথা। ইমরান দুই প্রস্তাবই নাকচ করলেন।
মানেকা আবার স্বপ্ন দেখলেন। এবার আর কোনো ইশারা নয়। স্বপ্নে জানতে পারলেন
ইমরানের যে স্ত্রী দরকার, সেটা তিনি নিজেই। পাঁচ সন্তানের মা মানেকা
প্রস্তুত হলেন। তাঁর কাস্টম অফিসার স্বামী আপসে আপ বিচ্ছেদে রাজিও হলেন।
সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে ইমরান খান দুই দিকেই তলোয়ার ঘুরিয়েছেন।
পাকিস্তানের হিন্দুদের নিয়ে অসহিষ্ণু মন্তব্য করায় তিনি একজন মন্ত্রীকে
বরখাস্ত করেছেন। আবার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক পরামর্শক
পরিষদের একজনকে ছাঁটাইও করেছেন। চীন যাওয়ার পথে বিমানে সফরসঙ্গী বন্ধু পপ
গায়ক আলী জাফর খান তাঁর ডান পক্ষপাতিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করায় উত্তর দিয়েছিলেন,
‘আমাদের সমাজ কিছু বিষয় নিয়ে স্পর্শকাতর। সেগুলো নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে
গেলে বিপদে পড়তে হবে। ...আমি একজন উদারবাদী মানুষ। আমার ভারতে বন্ধু আছে,
অবিশ্বাসীদের মাঝেও আমার বন্ধু আছে। কিন্তু এখানে সতর্ক হওয়া ছাড়া উপায়
নেই।’
আরব্য রজনীর মতো চমকের বিয়ে
২০১৮–এর ফেব্রুয়ারিতে
ক্রিকেটার আর ভবিষ্যৎ–দ্রষ্টার বিয়ে হলো ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে ছোট পারিবারিক
অনুষ্ঠানে। এর ছয় মাস পর ইমরান খান হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। পিঙ্কি
পীরনি হলেন পাকিস্তানের ফার্স্ট লেডি।
ইমরান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লোকরঞ্জক। পাশের দেশ মোদি, তুরস্কের এরদোয়ান
বা ব্রাজিলের বোলসোনারো থেকে তাঁর কোনো বিশেষ তফাত নেই। দক্ষিণ এশিয়ার
সবচেয়ে ধীরগতির অর্থনীতিকে তিনি বিদেশের ব্যাংক থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ
ফেরত এনে বাঁচিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তব বলছে তিনি একজন
নিপাট এলিট ক্লাসের লোক। যাঁরা তাঁর বিরোধিতা করেন, তাঁদের থেকেও এলিট।
২০০২ সালে এরাব নিউজে একটি প্রবন্ধে বলেছিলেন, কেমন করে তিনি বাদামি চামড়ার
পাক্কা সাহেব হচ্ছিলেন। তিনি নিজে বলতে চান যে এই সাহেবিয়ানা ছেড়ে তিনি
মানুষের কাছে আসতে পেরেছেন।
যেখানেই যান না কেন, নিজের উপস্থিতি ইমরান খান জানান দিতে দক্ষ ছিলেন,
অভ্যস্ত তো বটেই। আর রাজনৈতিক বুদ্ধির যেটুকু ঘাটতি ছিল, তা নিজের
জনপ্রিয়তা আর কথার তোড়ে সময় নিয়ে কাটিয়ে উঠছিলেন। তাঁর ক্রিকেট সহযোদ্ধা
ওয়াসিম আকরাম বলেছিলেন, ‘মানুষ দুই ধরনের: অনুসারী আর নেতা। সন্দেহ নেই
ইমরান খান নেতা অংশের মধ্যে পড়েন। শুধু ক্রিকেটে নয়, সব ক্ষেত্রে।’ ইমরানের
দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম বলেছিলেন, ‘তাঁকে অকর্মণ্য বা ভাঁড় বলতে পারেন, তাঁর
অর্থনৈতিক জ্ঞানগম্মি একেবারে নেই। একাডেমিক বুদ্ধি তাঁর নেই বললে চলে।
তবে তিনি জানেন কেমন করে আপনাকে নিজের পক্ষে আনতে হবে।’ ক্রিকেট হোক বা
রাজনীতি, ইমরান মানুষকে পাঠ করতে কখনো কার্পণ্য করেননি। খেলোয়াড়ি
জনপ্রিয়তাকে দক্ষতার সঙ্গে তিনি মুক্তিদাতার চরিত্রে রূপান্তরিত করেছেন।
এক জীবনে বহু জীবন
ইমরান খানের নিজের যাপিত জীবন,
তাঁর কথা আর কাজকে ভণ্ডামি বলার লোকের অভাব নেই। তবে এক জীবনে তিনি এত
রকমের জীবন কাটিয়েছেন যে সবগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা সত্যিই কঠিন। বর্তমানের
জীবনকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হলে তাঁর আগের জীবনগুলো অস্বীকার করা ছাড়া
উপায় নেই। পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার বলেছিলেন,
‘এই লোকটার জেকিল অ্যান্ড হাইড সমস্যা আছে। সে আসলে একই সময়ে দুটো মানুষ।’
পাকিস্তানে রাজনীতি মানে হচ্ছে, কাউকে ক্ষমতায় বসানো, তারপর লোক হাসানো।
গোটা কয়েক শক্তি এখানে কাজ করে। বিশাল ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী আর সামন্ত
প্রভুরা—যারা গ্রামীণ ভোটের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এরাই নিজেদের মাঝে
দড়ি–টানাটানি করে পাকিস্তানের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ইমরান নিজে জেনারেল মোশাররফের তীব্র বিরোধী ছিলেন। এখন তাঁর সরকারে মোশাররফ
আমলের দশ মন্ত্রী বহাল তবিয়তে টিকে আছেন।
সমালোচকেরা তাঁকে কখনো ‘তালিবান খান’ নামে ডাকেন। তাঁকে কখনো ধর্মীয়
উগ্রবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে হয়। পেশোয়ারে চার্চে বোমায় ৮১ জন
নিহত হওয়ার কিছুদিন পর তিনিই তালিবানদের পাকিস্তানে রাজনৈতিক দপ্তর খোলার
আমন্ত্রণ জানান। তাঁর সরকার মুক্তহস্তে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুদান
দিয়ে এসেছে। সেগুলোর মধ্যে আফগান তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের
প্রতিষ্ঠানও আছে। পশ্চিমাদের সমালোচনায় তিনি যত যুদ্ধংদেহী, ধর্মীয় উগ্রবাদ
প্রসঙ্গে ততটা নন।
ইমরান খানের ব্যক্তিগত জীবন সত্যিই চমকপ্রদ। এত বড় বড় মোড় তিনি নিজ
জীবনে এনেছেন। আর প্রতিটি মোড় নিয়ে এসেছে সফলতা। অন্তত এখন পর্যন্ত তো তা–ই
মনে হচ্ছে। তবে তাঁর জীবনের এই চমক আসলে তাঁর সমাজের সব দ্বৈততার
প্রতিফলনমাত্র। ইমরানের জীবন আর রাজনীতির এই দ্বৈততা হঠাৎ করে আসেনি।
এগুলোই বরং ইমরান খানকে তৈরি করেছে। এটাই হয়তো তাঁর দেশের সমাজের আসল ছবি।
জানেন কিসের বিপক্ষে থাকতে হবে
অধিকাংশ লোকরঞ্জক
নেতার মতোই ইমরান খান কিসের পক্ষে থাকবেন, তার চেয়ে ভালো জানেন, তাঁকে
কিসের বিপক্ষে থাকতে হবে। তাঁর বক্তৃতায় শাসক অভিজাতদের বিরুদ্ধে কথা
থাকেই। যদিও তিনি নিজে সেই শ্রেণিরই লোক। এই শ্রেণির নেক নজর আর সমর্থন না
থাকলে তিনি ক্ষমতায় আসতে পারতেন না। আবার তুরস্কের রাষ্ট্রনায়ক কামাল
আতাতুর্কের তিনি সমালোচনা করেন। কারণ, তাঁর মতে, বাইরে থেকে পশ্চিমা
ব্যবস্থা চাপিয়ে দিলে উল্টো তা দেশকে পিছিয়ে দেয়।
এই পলকা আধুনিকতার সমালোচনা হয়তো উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তবে পশ্চিম নিছক
ভোগবাদী ছাড়া আর কিছু নয়—এই কথাও সরলীকরণ। আবার তাদের যেসব অর্জন বাদ দেওয়া
যায় না, সেগুলো তিনি নিজের সংস্কৃতির অবদান বলে হজম করে ফেলতে চান।
ইমরান খানের এই মোড় পরিবর্তনের অতীত ইতিহাস সাধারণ্যে বেশ আগ্রহ
জাগিয়েছে। সে আগ্রহের জোর বোঝা গেল যখন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান ১০
মাসের দাম্পত্য জীবন বাজেভাবে শেষ হওয়ার পর সবকিছু ফাঁস করে দেওয়া রকমের
একটা বই লিখলেন। সেই বই কতটা প্রতিহিংসামূলক, সে আলোচনা এক পাশে রেখেও
সেখানে রাজনীতির হিংস্র অরণ্যে ক্রমে একাকী হয়ে আসা একজন মানুষকে দেখতে
পাওয়া যায়। সেই সময় তিনি এমন বহু কিছু করেছেন বলে রেহামের দাবি, যা
বর্তমানের ইমরান খানকে ধসিয়ে দিতে পারে। সেই সময়ের বন্ধুরা নাকি এখন আর
ইমরানের কাছে–পিঠে ঘেঁষতে পারে না।
২০১৩ সালে বহু বছরের সামরিক শাসনের পর পাকিস্তানে এক অভাবনীয় ঘটনা
ঘটল—শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। এটা সামরিক শক্তির জন্য হুমকি ছিল।
মার্কিন দেশে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানির মতে,
বর্তমানের পাকিস্তানে কায়েমি প্রতিষ্ঠান আর ইমরান খানের মধ্যে এক অশুভ
মৈত্রী গড়ে উঠেছে। তবে সেই মৈত্রীর এক জনপ্রিয় রূপ আছে। ২০১৪ সালেই ইমরান
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ধসানোর জন্য আন্দোলন শুরু করেন। এর নাম
দিলেন ‘ধরনা’। সেই আন্দোলনের সময়, ২০১৪ সালের আগস্টে ফারহান ভির্ক নামের এক
মেডিকেল ছাত্র একটা ঘটনা লিখেছেন। ঘটনাটা ফারহানের জবানিতে এমন:
‘পুলিশ তখন টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়ছে। বাকি সবাই যে যার মতো
পালিয়েছে। কিন্তু ইমরান খান তখনো সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন! আমি ভাবলাম যদি এমন
অবস্থাতেও এই লোকটা এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তাহলে এর একটা অন্য রকম
অর্থ আছে।’
সমালোচকদের মতে, এই রকম সমর্থকেরা ইমরানের বড় শক্তি।
জেনারেল বনাম জনগণ: তুমি কার লোক?
জেনারেলদের
দৃষ্টিতে এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! আপাতদৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক সরকার
থাকবে ক্ষমতায়। সেই সরকারের ওপর দেশের অজস্র সমস্যার দায় চাপানো যাবে।
আড়ালে থেকে জেনারেলরা আগের মতোই দেশ চালিয়ে যাবেন। সমালোচকদের কথা না
মানলেও ইমরানের সামনে বড় সব চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ঋণে জর্জরিত দেশকে
অর্থনৈতিক হতাশার কবল থেকে বের করে আনতে হবে। সেই লক্ষ্যে তিনি আইএমএফের
কাছে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেইল আউট চাইছেন; যে আইএমএফের কাছে তিনি ‘ভিক্ষা’
চাইতে ঘোর আপত্তি জানিয়েছিলেন।
পৃথিবীতে জনপ্রিয় সব নেতার কাল চলছে এখন। ইমরান খান সেই দলের একজন বললে
অত্যুক্তি হবে না। পাকিস্তানি ব্রিটিশ লেখক মোহসিন হামিদ বলেছিলেন, এই রকম
নেতারা আমাদের বিশ্বাস করতে চাওয়ার আকুতির প্রকাশ। তাঁরা একই রকম করে
বারবার আসেন। তাঁরা সামরিক বাহিনীর চেয়েও ভালো জানেন বলে মনে করে তাদের
হাতেই ধসে পড়েন।
তবে ইমরান খান এখনো তাঁর দেশের মানুষের কাছে কাপ্তান নামে পরিচিত। আর
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াই তিনি ভালোই করেছেন। প্রায় ২২ বছর বহু হতাশার মধ্য
দিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন। সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষেরও কিছু দুর্বল দিক থাকে।
তার মাঝে থাকা এক শিশু আশ্বাস চায়, পরিচর্যা চায়। সেই সময়টাতে হয়তো ছোট এক
শহরের একজন নারী তাঁকে সেই আশ্বাস দিয়েছেন। কিছুদিন আগে কথা ছড়াল যে মানেকা
আর খানের সম্পর্ক ঠিক যাচ্ছে না। এরপর ইমরান খান বিবৃতি দিলেন যে তিনি
মানেকার সঙ্গে ‘শেষনিশ্বাস পর্যন্ত থাকবেন’। অপর দিকে ভবিষ্যৎ–দ্রষ্টা
মানেকার কাছ থেকেও বিবৃতি পাওয়া গেল, ‘কেবল ইমরান খানই পরিবর্তন আনতে
পারেন। তবে পরিবর্তনে সময় লাগে।’
পিঙ্কি পীরনির ভবিষ্যদ্বাণীর প্রথমাংশ তো সফল হলো। দেখা যাক বাকিটার ভাগ্যে কী ঘটে।
ভ্যানিটি ফেয়ার পত্রিকা অবলম্বনে লিখিত