খেলার প্রতি ভালোবাসা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব হয়ে
থাকে না। হরিয়ানার রোহতাক অঞ্চলে বেড়ে ওঠা শেফালি তার উদাহরণ। নিজের এলাকায়
মেয়েদের কোনো ক্রিকেট শেখানোর একাডেমি না থাকায় শেফালিকে চরম পথই বেছে
নিতে হয়েছিল। খেলা শিখেছেন ছেলেদের একাডেমিতে, ছেলেদের ছদ্মবেশ নিয়ে!
সেই শেফালিই এখন বিশ্লেষকদের চোখে ভারতীয় নারী
ক্রিকেটের ‘ভবিষ্যৎ’। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রোটিয়া নারীদের বিপক্ষে তার
৩৩ বলে ৪৬ রানের ইনিংস ভারতের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। এ বছর মেয়েদের সিনিয়র
টি-টোয়েন্টি লিগে ৬ ইনিংসে ১৮৬ রান করেছেন শেফালি। স্ট্রাইকরেট ১৮৭.৮৭, এর
মধ্যে ৮৮ শতাংশ রান এসেছে বাউন্ডারি থেকে। শেফালির ক্রিকেটার হয়ে ওঠা মূলত
তার বাবা সঞ্জীব ভার্মার জন্য। অনেক অনুরোধ করেও মেয়েকে ছেলেদের একাডেমিতে
ভর্তি করতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত বাবা হয়ে মেয়েকে নির্দেশ দেন, চুল
কেটে ছেলেদের মতো হয়ে যাও।
হরিয়ানার রোহতাক জেলার সবগুলো ক্রিকেট একাডেমিই
সঞ্জীব ভার্মাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ছোট্ট একটি অলংকার দোকানের মালিক এই
ক্রিকেট পাগল বাবা ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে বলেছেন সেসব দাহকালের কথা, ‘কোনো
একাডেমিই ভর্তি করতে চায়নি। কারণ রোহতাকে মেয়েদের জন্য কোনো একাডেমি ছিল
না। তাকে (শেফালি) একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য সবার কাছে আমি বলতে গেলে হাত
পেতেছি। কিন্তু কেউ কানে তোলেনি। সব জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ওর
চুল কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর ছেলে হিসেবে তাকে একাডেমিতে ভর্তি
করাই।’
শেফালি যে ছেলের ছদ্মবেশে ক্রিকেট শিখছে, তা বুঝে ফেললে বিপদের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তার বাবা জানালেন, কেউ টের পায়নি, ‘ভয় তো ছিলই। তবে কেউ বুঝতে পারেনি। নয় বছর বয়সী বাচ্চাদের দেখতে একইরকম লাগে।’ ছেলেদের সেই একাডেমি ভীষণ কঠিন সময় কেটেছে শেফালির। ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতে হতো। এতে চোটও পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তার স্কুল মেয়েদের ক্রিকেট দল বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। ছেলেদের সঙ্গে নিজের মেয়ের খেলার সেই দিনগুলো সম্পর্কে সঞ্জীব বলেন, ‘ছেলেদের সঙ্গে খেলা তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। হেলমেটে প্রচুর আঘাত পেত। আমি ভয় পেলেও সে কিন্তু হাল ছাড়েনি।’
শেফালি যে ছেলের ছদ্মবেশে ক্রিকেট শিখছে, তা বুঝে ফেললে বিপদের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তার বাবা জানালেন, কেউ টের পায়নি, ‘ভয় তো ছিলই। তবে কেউ বুঝতে পারেনি। নয় বছর বয়সী বাচ্চাদের দেখতে একইরকম লাগে।’ ছেলেদের সেই একাডেমি ভীষণ কঠিন সময় কেটেছে শেফালির। ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতে হতো। এতে চোটও পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তার স্কুল মেয়েদের ক্রিকেট দল বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। ছেলেদের সঙ্গে নিজের মেয়ের খেলার সেই দিনগুলো সম্পর্কে সঞ্জীব বলেন, ‘ছেলেদের সঙ্গে খেলা তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। হেলমেটে প্রচুর আঘাত পেত। আমি ভয় পেলেও সে কিন্তু হাল ছাড়েনি।’
শচীন টেন্ডুলকারকে দেখে বড় ক্রিকেটার হওয়ার প্রেরণা
পেয়েছেন শেফালি। ২০১৩ সালে হরিয়ানার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ রঞ্জি ট্রফির
ম্যাচ খেলেন টেন্ডুলকার। সে ম্যাচে গ্যালারিতে মেয়েকে কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে
ছিলেন তার বাবা। পিটিআইয়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ করেন শেফালি,
‘শচীন স্যারকে দেখতে স্টেডিয়ামের ভেতরে যত মানুষ বাইরেও সে পরিমাণই ছিল।
তখনই বুঝতে পারি ভারতের ক্রিকেটার হওয়া কত বড় ব্যাপার। বিশেষ করে শচীন
স্যারের মতো হতে পারলে। ওই দিনটা জীবনে কখনো ভুলব না। আমার ক্রিকেট
ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে ওখান থেকে।’
এবার মেয়েদের ঘরোয়া ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ১৯২৩ রান
করেছেন শেফালি। রয়েছে ছয়টি সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটি। রোহতাকে সেন্ট পল স্কুলে
দশম শ্রেণির এ ছাত্রী জানেন, তার ক্রিকেট-যাত্রা কেবল শুরু হলো, ‘ভারতের
হয়ে যত দিন সম্ভব খেলতে চাই এবং দেশকে যত বেশি সম্ভব ম্যাচ জেতাতে চাই।’