অত্যাধিক পরিশ্রমকালীন সময়ে, ভয় পেলে, হঠাৎ কোনো কারণে চমকে উঠলে
মানুষের বুকে এক ধরনের কাঁপুনির মতো অনুভূতির সৃষ্টি হয়, এ অবস্থাকেই
প্যালপিটিশন বা বুক ধড়ফড় করা বলা হয়ে থাকে। উপরোক্ত কারণে সুস্থ স¦াভাবিক
মানুষের প্যালপিটিশন হয়ে থাকে এবং এটাকে কোনো অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করা
যাবে না। তবে অনেক ধরনের শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্যালপিটিশন হতে পারে।
কারও জ¦র-কাশী হলে, অ্যাজমায় আক্রান্ত হলে, ডায়রিয়া বা বমি অথবা
রক্তক্ষরণের ফলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে, প্যালপিটিশন দেখা দিয়ে থাকে।
এ ধরনের প্যালপিটিশন খুব সহজেই নিরাময় হয়ে যায় বিশেষ করে উপরে বর্ণিত
কারণগুলো দূরীভূত হয়ে গেলে। কি কারণে প্যালপিটিশন হয়ে থাকে? যদি কোনো কারণে
হার্ট বা হৃৎপিন্ড স¦াভাবিক গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে থাকে ঠিক তখনি
মানুষ প্যালপিটিশন অনুভব করে থাকে। অনেকে বলে থাকেন যে তার এমন একটা
অনুভূতি হচ্ছে যেন তার বুকে ঝড় বা তুফান হচ্ছে, কেউ কেউ বলে থাকেন বুকের
মাঝে কি যেন একটা লাফাচ্ছে বা ছটফট করছে বা বুকের মাঝে হাতুড়ি পিটানোর মতো
অনুভূতি হচ্ছে। অনেক ব্যক্তিরা এমতাবস্থায় অনেক ভয় পেয়ে থাকেন। মানুষ কখনো
কখনো এমন একটা সময় প্যালপিটিশন অনুভব করে থাকেন যখন তার হৃৎপিন্ড বা হার্ট
দ্রুত নয় বরং স¦াভাবিক গতিতে চলতে থাকে। আমাদের বুকের মাঝে সার্বক্ষণিকভাবে
হার্ট মিনিটে ৭০-৮০ বার বিট করতে থাকে, কিšুÍ স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা কখনই
তা অনুভব করি না। যদি কোনো সময় ব্যক্তি স্বাভাবিক হার্ট বিট হলেও তা অনুভব
করে থাকেন তবে এ অবস্থাকেও প্যালপিটিশন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তার
মানে হার্ট দ্রুত অথবা স্বাভাবিক যে গতিতেই চলুক না কেন, ব্যক্তি যদি
হার্ট বিট অনুভব করতে থাকেন তবে সেটাকে প্যালপিটিশন বলে ধরে নেওয়া হয়।
প্যালপিটিশনের সবচেয়ে বড় এবং মারাত্মক কারণগুলো হলো, বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ
বা হার্টের অসুস্থতা, যেমন হার্ট ফেইলুর, হার্টের ভাল্বের সমস্যা,
মাইয়োকার্ডাইটিস, কার্ডিওমাইয়োপ্যাথি, জন্মগত হৃদরোগ, বাতজ¦রজনিত হৃদরোগ,
হার্টব্লক, রক্তশূন্যতা জনিত হৃদরোগ ইত্যাদি। প্যালপিটিশনের আরও একটি বড়
কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপ্রেসার, থাইরয়েড হরমোনজনিত কারণে প্যালপিটিশন
হয়ে থাকে। প্যালপিটিশনের আরও একটি মারাত্ম¡ক কারণ হলো অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
এবং হার্টঅ্যাটাক বা হার্টস্টোক অথবা মাইয়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন।
প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষের হৃৎপিন্ড প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার
স্পন্দিত হয়ে থাকে অর্থাৎ প্রতিমিনিটে হার্ট বিটের সংখ্যা ৬০ থেকে ১০০টি,
তবে বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের হার্ট ৭০ থেকে ৮০টি বিট দিয়ে থাকে। চিকিৎসকরা
হাতের কব্জিতে নাড়ির বা পালস দেখে হার্ট বিট বা নাড়ি গতি নির্ণয় করে থাকেন।
নাড়ির গতি যদি ৬০ থেকে ১০০ এর মাঝে থাকে তবে তাকে স্বাভাবিক হিসেবে
বিবেচনা করা হয়, যদি কারও নাড়ির গতি ১০০ থেকে বেশি বা ৬০ থেকে কম হয়ে যায়
তবে তাকে অস্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই
প্যালপিটিশনের সময় হার্টবিট ১০০ এর চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। কারও যদি
পরিশ্রমকালীন সময়ে খুব সহজেই প্যালপিটিশন অনুভূত হয় এবং তার সঙ্গে বুকব্যথা
এবং বিশ্রাম গ্রহণ করলে এসব সব অসুবিধা দূরীভূত হয়ে যায় তবে বুঝতে হবে
তিনি মারাত্মক ধরনের হার্টের অসুস্থতায় ভুগছেন। হার্টের অসুস্থতা অনেকের
প্যালপিটিশনের সঙ্গে পায়ে পানি জমা হওয়ার মতো অবস্থা হতে দেখা যায় এবং এ
ক্ষেত্রে রোগীর পরিশ্রম ছাড়াই অর্থাৎ বিশ্রামকালীন সময়ে প্যালপিটিশন অনুভূত
হতে থাকে। এ ধরনের রোগীরা হার্ট ফেইলুরে ভুগছেন বলে ধরে নেওয়া যায়।
যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারাও প্যালপিটিশনে আক্রান্ত হতে পারে। যদি তার
রক্তচাপের মাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায় অথবা দীর্ঘদিন যাবৎ উচ্চ রক্তচাপে ভোগার
ফলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তবে যে কোনো ধরনের
প্যালপিটিশনকেই গুরুত্বের সহিত বিবেচনায় এনে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত, কারণ
প্রায় ক্ষেত্রেই প্যালপিটিশন হৃদরোগের কারণেই হয়ে থাকে।
ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট
(প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।