লক্ষণীয়, চলমান অভিযানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মাদক, অর্থ
পাচার ও অস্ত্র আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। এসব আইনে শাস্তি বেশি। ১৮৬৭ সালের
প্রকাশ্য জুয়া আইনটির কোনো উল্লেখ নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,
মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশ ক্যাসিনোর মতো বিষয়ে যুগোপযোগী পূর্ণাঙ্গ আইন
করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ তেমন কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায় না। ১৮৬৭
সালের পাবলিক গ্যাম্বলিং আইন যুক্তরাজ্য করেছিল তার উপনিবেশগুলোর জন্য।
তারা এই আইন বহুকাল আগেই বাতিল করে দিয়েছে। ১৮৬৭ সালের আইন যুগোপযোগী করা
হবে কি না, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়া রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কেউ এত দিন বিষয়টির দিকে নজর দিইনি। মিডিয়াও দেয়নি।’ তবে এ বিষয়ে ছয় বছর আগে প্রথম আলোর
একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছিল। এতে ঢাকার কিছু স্পোর্টিং ক্লাব খেলাধুলা
বাদ দিয়ে ক্লাবগুলোকে ‘শুধুই জুয়ার আসরে’ পরিণত করার বিষয়টি প্রকাশ
পেয়েছিল। এমনকি নির্দিষ্টভাবে ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে জুয়ার পক্ষে
হাইকোর্টে রিট করার তথ্যও সেখানে ছিল। ২০১০ সালে ১২টি ক্লাব পুলিশের অভিযান
থেকে তাদের কথিত ‘ইনডোর গেমস’ বাঁচাতে রিট করে। আদালত তিন মাস সময় দিয়ে
বলেছিলেন, যথাযথ আইনি পদক্ষেপ ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এবার র্যাবের
নেতৃত্বাধীন অভিযানে ওই ১২ ক্লাবের মধ্যে ইয়ংমেনসসহ ৭টি ক্লাব আছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত রাতে প্রথম আলোকে
বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে কী ছিল, আমার জানা নেই। আর বিপুল সংখ্যক
রিটের চাপে থাকি আমরা, শুনানির জন্য রিটকারীদেরই তো বেশি গরজ থাকা উচিত।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ যখন তাগাদা দেয়, তখনই তাড়াতাড়ি হয়। অতীতে গ্রামেগঞ্জের
জুয়ার বিষয়ে কোর্টকে ভুল বুঝিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম অর্ডার তারা
নিয়েছে। অবকাশের পরে দ্রুত শুনানি করতে চাই।’ সাম্প্রতিক জুয়াবিরোধী অভিযান
সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অভিযান বন্ধ করা যাবে না। আমাদের গরীব দেশ। জুয়ার
নামে বহু পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে।’
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট
জনস্বার্থে করা একটি মামলায় আরেকটি অন্তর্বর্তী আদেশ দেন, যাতে ঢাকা
ক্লাবসহ ১৩টি স্বনামধন্য ক্লাবে অর্থের বিনিময়ে ইনডোর গেমস, জুয়া বন্ধের
নির্দেশ দেওয়া হয়। ঢাকা ক্লাব এর বিরুদ্ধে আপিল করে। আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের
১১ ডিসেম্বর আট সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। ঢাকা ক্লাবের
আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, আট সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশনাও ছিল। কিন্তু সেটা আর না হওয়ার কারণে আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ আজও বহাল আছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়, ক্লাবগুলো
ইনডোর গেমসের সুরক্ষা চেয়েছে। তারা ১৮৬৭ সালের আইনে মহানগর এলাকায়
জুয়াবিরোধী আইনের অকার্যকরতার বিষয়টি আদালতে নিয়ে যায়নি। ২০১৪ সালে
জুয়াসংক্রান্ত হাইকোর্টের একমাত্র রায়টিতেও এ প্রসঙ্গ আলোচিত হয়নি।
প্রচলিত আইনে মহানগর এলাকার মধ্যে শুধু ‘রাস্তায় জুয়া
খেলার’ (স্ট্রিট গ্যাম্বলিং) ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্টে ৫৬টি রিট করেছিল ক্লাবগুলো। এসব রিটে তারা
পুলিশের অভিযান ঠেকাতে শুধু ‘ইনডোর গেমস’ চালুর সপক্ষে আদালতের হস্তক্ষেপ
প্রার্থনা করে।
২০১৩ সালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রথম আলোকে
বলেছিলেন, এসব রিটের (৫৬টি) বেশির ভাগের চূড়ান্ত শুনানি হয়নি। ছয় বছর পরও
অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্লাবগুলো হাইকোর্টের
অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের দোহাই দিয়ে ‘ইনডোর গেমসের’ নামে জুয়া চলমান
রেখেছে। সামগ্রিকভাবে আইনগত ও রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় বলা যায়, আলোচ্য
বিষয়টি রাষ্ট্র সব সময় ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। রাষ্ট্র কখনো বাস্তবতার
মুখোমুখি হতে চায়নি। বরং পরিকল্পিতভাবে পলায়নপর থেকেছে। সে কারণে রিটের
ছড়াছড়ি ঘটলেও রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারা রুলের জবাব দেওয়ার প্রশ্নে
অব্যাহতভাবে শিথিল মনোভাব দেখিয়ে আসছেন।
যারাই আইন ভাঙছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা স্বাভাবিক
প্রত্যাশা। অথচ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বাছাই করে গ্রেপ্তার, আবার অন্তরীণ
হওয়া ব্যক্তির বিষয়ে রাষ্ট্রীয় লুকোচুরি চলছে বলেও সন্দেহ দানা বাঁধছে।
যেমন যুবলীগ নেতা সম্রাট কোথায়, তা নিয়ে ধূম্রজাল আছে। আবার বগুড়ায় ৬০
বছরের বৃদ্ধকে জেলে পুরতে আইনের আপন গতির দোহাই দেওয়া হচ্ছে।
মহানগরে জুয়ার বৈধতা
সাবেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে রাজধানী ঢাকাসহ
মহানগরগুলোকে ১৮৬৭ সালের দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্টের আওতামুক্ত করা
হয়েছিল। ফলে আইনত দেশের মহানগর এলাকায় মুনাফার আশায় যেকোনো ধরনের
জুয়াসামগ্রী ক্রয়, রক্ষণ ও ব্যবহার বৈধতা পেয়ে যায়। কারণ, ব্রিটিশ
রাজত্বকালের ১৮৬৭ সালের আইনে নির্দিষ্টভাবে জুয়া এবং কমন গেমিং হাউস
নিষিদ্ধ করা আছে। মহানগরগুলোর বাইরে তাই সব ধরনের জুয়া এখনে নিষিদ্ধ।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭৬ সালে
প্রথমবারের মতো ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ সংশোধন করে ঢাকা মহানগরীকে ওই
আইনের আওতামুক্ত করে জুয়া খেলার পথ খোলা হয়। এরপর ১৯৭৮ সালে আরেকটি
সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সব মহানগরীকে জুয়া নিষিদ্ধ আইনটির আওতামুক্ত করা
হয়। জেনারেল জিয়ার আমলে কেন তখন ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, জানতে চাইলে
সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তখন সরকারে
ছিলাম না। তবে মনে হচ্ছে, মহানগর এলাকায় পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে কিছু
হোটেলে জুয়া ও পানীয়ের সুবিধা বজায় রাখতে ওই সংশোধনী আনা দরকার মনে করা হতে
পারে। কিন্তু ওই সংশোধনী সত্ত্বেও মহানগর এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে ক্লাব বা
ক্যাসিনো বসানোর সুযোগ আছে বলে মনে করি না।’
মহানগরগুলোকে ১৮৬৭ সালের আইনের আওতামুক্ত করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে
বলেন, ১৯৭৬ সালের পুলিশ অধ্যাদেশে যেকোনো ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ করা আছে।
কিন্তু ওই অধ্যাদেশসহ দেশের বিদ্যমান আইনগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৮৬৭
সালের আইনেই ‘কমন গেমিং হাউস’ সংজ্ঞায়িত আছে, যেখানে টাকা দিয়ে খেলা
নিষিদ্ধ আছে। এমনটা অন্যান্য আইনে নেই।
বিচারপতি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন,
আইনের প্রশ্নের চেয়েও বড় হলো, ইনডোর গেমসের নামে আন্ডারওয়ার্ল্ড তৈরি
হচ্ছে। এটা আইনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার জন্য ভয়ঙ্কর। আজ যা চলছে, সেটা ১৯৭৬ সালে
কল্পনা করা যায়নি।
বিচারপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি হাইকোর্ট
বেঞ্চ ২০১৪ সালের ১৮ জুন জুয়াবিরোধী একটি রায় দেন। এতে বলা হয়, অর্থ দিয়ে
সব খেলাই অবৈধ। সেই অর্থে জুয়া ও গেমস সমার্থক। সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ
অনুযায়ী, হাইকোর্টের এই নির্দেশনাই প্রচলিত আইন। ২০১৩ সালে নওগাঁর
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ক্লাবে কথিতমতে নিপুণ, চড়চড়ি, ডায়েস, ওয়ান-টেন,
ওয়ান-এইট নামে জুয়া খেলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। সেই রিটে হাইকোর্ট
বিভাগ ওই পর্যবেক্ষণ দেন। অথচ বর্তমান সরকারের আমলে প্রণীত আমদানি
নীতিমালায় ক্যাসিনোসামগ্রী বৈধ পণ্যের তালিকায় আছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, ক্যাসিনো ও
জুয়াসংক্রান্ত দেশের প্রচলিত আইনগুলোর সবটাই অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ। ১৮৬৭
সালের পাবলিক গ্যাম্বলিং আইনটি ইতিহাসের কোনো পর্বেই সমগ্র ব্রিটিশ ভারতের
জন্য প্রযোজ্য ছিল না। এটি সব সময় নির্দিষ্ট কিছু রাজ্য ও এলাকার জন্য
কার্যকর ছিল। তবে লক্ষণীয় হলো, ১৮৬৭ সালের আইনটির নাম পাবলিক গেম্বলিং হলেও
এই আইনে কিসে ‘গ্যাম্বলিং’ হয়, তা ব্যাখ্যা করা হয়নি। লটারি বৈধ কিন্তু
তারও সংজ্ঞা নেই।
১৯৭২ সালে অন্য অনেক আইনের মতো ১৮৬৭ সালের আইনটি গ্রহণের
সময় হর্সরেসিং বা ঘোড়দৌড়ের ওপর বাজি ধরাকে সুরক্ষা দেওয়া হয়। ১৯২২ সালের
বিনোদন ট্যাক্স আইনে তাই বেটিং ট্যাক্স এখনো বহাল আছে। পাকিস্তান আমলে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোড়দৌড়ের বাজি জনপ্রিয় ছিল। সে জন্য এলাকাটি রেসকোর্স
হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৮৬৭ সালের আইনে ‘কমন গেমিং হাউস’-সংক্রান্ত অপরাধের
জন্য ২০০ থেকে ৬০০ টাকা জরিমানা ছিল। অনাদায়ে এক থেকে ছয় মাসের জেল। তবে
পরে একই অপরাধ করলে শাস্তি দ্বিগুণ। তদুপরি অনধিক অর্থদণ্ড ৬০০ টাকা অথবা ১
বছর পর্যন্ত জেল হবে। রাস্তায় পাখি বা প্রাণী দিয়ে জুয়া খেলার শাস্তি
অনধিক ৫০ টাকা জরিমানা অথবা অনধিক এক মাসের বিনাশ্রম বা সশ্রম জেল।
১৯৭৬ সালের ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশে এ বিষয়ে দুটি ধারা
আছে। ৯২ ধারা বলেছে, যারাই জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে কোনো সড়ক বা পাবলিক
প্লেসে (জনসমাগম স্থল) মিলিত হবে, তাদের অনধিক ১০০ টাকা জরিমানা করা যাবে।
৯৩ ধারা বলছে, গণবিনোদনে কেউ কোনো খেলায় যুক্ত হলে তাকে অনধিক ২০০ টাকা
জরিমানা করা যাবে। সেদিক থেকে পুলিশ অধ্যাদেশের চেয়ে ১৮৬৭ সালের আইনটি
কিছুটা নির্দিষ্ট। সেখানে ‘জুয়ার’ সংজ্ঞা নেই। কিন্তু কমন গেমিং হাউসের
সংজ্ঞায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনো বাড়ি, কক্ষ, তাঁবু বা গাড়িসহ যেকোনো
স্থানই হোক না কেন, সেখানে মুনাফা বা লাভের আশায় কোনো খেলার সামগ্রী
ব্যবহৃত হলে তা দণ্ডনীয়। অবশ্য ১৯১৩ সালেই এক সংশোধনী এনে বলা হয়, যে খেলায়
দক্ষতা থাকবে, সেখানে এই আইন প্রযোজ্য হবে না।
সংবিধান কী বলে
আওয়ামী লীগের কিছু নেতার দাবি, বাহাত্তরের সংবিধানে জুয়া
নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এমন দাবি যথাযথ নয়। সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা
আছে, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র
অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষত আরোগ্যের প্রয়োজন
কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক
পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র
কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ ১৮ অনুচ্ছেদের ২ উপদফা বলেছে,
‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ
করিবেন।’ কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে সংবিধান শর্তহীনভাবে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ
করেছে। উপরন্তু কোনো নাগরিক এই অনুচ্ছেদের কার্যকরতা বলবৎ করার জন্য
হাইকোর্টে রিট দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার আশা করতে পারে না। কারণ,
বাহাত্তরের সংবিধানই বলে দিয়েছে, এই বিধান আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য নয়।
পাকিস্তান আইন কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৬১ সাল পর্যন্ত
১৮৬৭ সালের আইন পশ্চিম পাকিস্তানে বহাল ছিল। আইয়ুব খানের আমলে ওই আইন
বিলোপ করে জুয়া প্রতিরোধ অধ্যাদেশ, ১৯৬১ জারি করা হয়। কিন্তু ওই আইনেই
ব্যতিক্রম রাখা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই আইন করাচির ফেডারেল এলাকা এবং বিশেষ
এলাকাগুলোতে কার্যকর হবে না। ১৮৭০ সাল থেকে অননুমোদিত লটারি দণ্ডবিধির
২৯৪(ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য করা হয়। ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের (কন্ট্রাক্ট ল)
৩০ ধারার আওতায় জুয়াসংক্রান্ত যেকোনো চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হয়। ব্রিটিশ
সংসদ হস্তক্ষেপ করার আগ পর্যন্ত ইংলিশ কমন লতে জুয়া নিষিদ্ধ ছিল না। ১৬৬৪
সালের গ্যাম্বলিং অ্যান্ড বেটিং আইনে ‘প্রতারণামূলক ও মাত্রাতিরিক্ত’ জুয়া
এবং ক্রীড়াবাজি দণ্ডনীয় করা হয়। এরপর ১৭১০ সালে আসে গেমিং আইন। ১৮৪৫ সালের
আইনে প্রথমবারের মতো বলা হলো, জুয়া খেলাসংশ্লিষ্ট সব ধরনের চুক্তিই বেআইনি।
১৮৯২ সালে এই আইন আরও কঠোর করা হয়। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির (যা বাংলাদেশে
বলবৎ) ২৯৪(ক) ধারায় অনুমোদনহীন লটারির জন্য জরিমানাসহ ছয় মাসের জেলের বিধান
আছে।
মালয়েশিয়ায় সীমিতভাবে জুয়া বৈধ। ২০১৬ সালে জুয়া থকে তার
রাজস্ব আয় ১৮০৫.২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালে
ভারতের ল কমিশনকে বেটিং আইনানুগ করা যায় কি না, খতিয়ে দেখতে নির্দেশনা দেন।
গত বছর ৫ জুলাই ল কমিশন ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক: গ্যাম্বলিং এন্ড স্পোর্টস
বেটিং ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক ১৪৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলেছে, বেটিং আর
গ্যাম্বলিং সমার্থক। আইনসিদ্ধ না হলেও গোপনে এসব গোটা ভারতে চলছে। বিচারপতি
বিএস চৌহানের নেতৃত্বাধীন কমিশন লাইসেন্সিংসহ ২১টি শর্তে জুয়া ও
ক্যাসিনোকে বৈধতা দিতে রাজ্যগুলোর জন্য একটি উপযুক্ত মডেল আইন তৈরির সপক্ষে
মত দেয়। ৬ সদস্যের কমিশনের মধ্যে এস. শিবকুমার ভিন্নমত দেন। তার যুক্তি,
‘ভারত সরকারের নীতি সাধারণভাবে জুয়াবিরোধী। সুপ্রিম কোর্ট শুধু ক্রিকেটে
বেটিং বৈধতা পরখ করতে বলেছিলেন। ভারতে জুয়া নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারের
এখতিয়ার নেই। সংবিধান এটা বিধানসভার কাছে ন্যস্ত করেছে।
সমাজ বিজ্ঞানী অধ্যাপক আর আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ গতকাল বলেন, জুয়ার বিলোপ অবাস্তব, এটা সমাধান দেবে না। অপ্রিয় বাস্তবতা মেনেই
রাষ্ট্র যৌন পল্লিকে আইনের আওতায় এনেছে। এখানেও লাইসেন্সিং, করারোপ
ইত্যাদির মাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।