বহুল আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ এখন লন্ডনে। সেখানে তিনি তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেশ ভালো আছেন। সর্বশেষ তিনি লন্ডন আসেন চলতি মাসের ১০ তারিখে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জিসান দুবাই ছাড়েন গত মাসে। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে লন্ডনে ঢোকেন। গত মাসের শেষ সপ্তাহে আবারও তিনি লন্ডন থেকে চিলি যান। সেখান থেকে গত ১০ অক্টোবর আবার লন্ডনে ফিরে আসেন।
জিসানের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, যে সময়ে জিসান গ্রেফতার হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে, সেই সময়ে জিসান লন্ডনেই অবস্থান করছিলেন। তবে আকবর নামে একজন ভারতীয় আটক হওয়ার খবর পাওয়া যায় দুবাইয়ে। তিন বছর আগে জিসান নিজের নাম পাল্টে আকবর নামে ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাই আসেন। সেই পাসপোর্ট তিনি ফেলে দেন। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের কাছে খবর রয়েছে আকবর নামে জিসান দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। দুবাই পুলিশের কাছেও এমন খবর ছিল। কিন্তু আকবর নামে যে ভারতীয় গ্রেফতার হয়, তার নামে দুবাই পুলিশ কোনো অভিযোগ খুঁজে পায়নি। অথচ বাংলাদেশ পুলিশ সেই অর্ধেক তথ্য নিয়েই প্রচার করে জিসান গ্রেফতার।
পুলিশ সদর দফতর জিসানকে নিয়ে অবশ্য গোলকধাঁধায় পড়ে। আকবর নামে এক ভারতীয় গ্রেফতারের পর এই গোলকধাঁধার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে পুলিশের কেউ এখন আর স্পষ্ট কিছুই বলতে চাচ্ছে না। যোগাযোগ করা হলে ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরের বাংলাদেশ ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম এ বিষয়ে আর কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে ৪ অক্টোবর তিনি বলেছিলেন, দুবাইয়ে জিসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে একটি চিঠি আমাদের কাছে আসে। চিঠিটি পাঠানো হয়েছে দুবাই পুলিশের এনসিবি থেকে। আমরা ইন্টারপোলের রেড নোটিসধারী এই অপরাধীকে গ্রেফতারের বিষয়ে তিন মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেছিলেন, গ্রেফতার হওয়ার সময় জিসানের কাছে ভারত ও ডোমেনিকান দুটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃত জিসানের ছবি ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়। সেই ছবি সেখান থেকে ডিবির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। ডিবি পুলিশ সেই ছবির সঙ্গে জিসানের বর্তমান ছবি মিলিয়ে নিশ্চিত করে যে, এটাই জিসান। সেই সূত্র ধরে নিশ্চিত হয়েছি দুবাইয়ে গ্রেফতার হওয়া ওই ব্যক্তিই জিসান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, জিসানকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। ৪ অক্টোবরের পর পুলিশের কাছ থেকে জিসান সম্পর্কে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানেও জিসান গ্রেফতারের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, আকবর নামে এক ব্যক্তি গ্রেফতার হন দুবাইয়ে। বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা সেখানকার একটি অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশি একজনকে ইন্টারপোল গ্রেফতার করেছে। তার এই একটি বাক্যই তখন জিসান গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। আর এ নিয়েই বাংলাদেশ পুলিশ আর সরকারও প্রচার করে, জিসান গ্রেফতার হয়েছে। যার কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে গতকালও জানা গেছে, জিসান আহমেদ রয়েছেন লন্ডনে। তবে তার জার্মানি স্থায়ী বসবাসের সব প্রক্রিয়াই প্রায় সম্পন্ন। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবির দুই ইন্সপেক্টরকে সরাসরি হত্যা করে আলোচনায় আসেন জিসান। এর পরে দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থেকে ২০০৫ সালে জিসান ভারতে চলে যান। সেখানে ২০০৯ সালে কলকাতা পুলিশের হাতে আটক হন। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে কলকাতায় বসেই নিয়ন্ত্রণ করতেন ঢাকার চাঁদাবাজি। জিসান ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই যান বছর দুয়েক আগে। আর এর পরে সেখান থেকেই ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। সেখান থেকে ভারতের পাসপোর্ট ব্যবহার করে জার্মানিতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পান বলেও জানা যায়। সেখান থেকেই মূলত ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে বেড়ান জিসান। মালিবাগ, মগবাজার, খিলগাঁও এলাকার আলোচিত সন্ত্রাসী জিসানের বিরুদ্ধে ঢাকায় একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।