চট্টগ্রাম নগরের
চান্দগাঁও এলাকায় জহির আহমদের পাঁচতলা ভবন। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি
করপোরেশন এ ভবনের গৃহকর নির্ধারণ করেছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ওই বছরের ২৮
জুন করপোরেশনের কর আদায়কারীকে সব টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে
রসিদ দেওয়া হয় ৫৫ হাজার টাকার। বাকি টাকার কোনো হিসাব নেই।
চার বছর ধরে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিয়েও এর
সমাধান পাননি প্রবাসী জহির আহমদ। গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি
করপোরেশন নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে এ অসহায়ত্বের কথা
তুলে ধরেন তিনি।
গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা ধরে
সিটি করপোরেশনের সেবার মান, পরিচ্ছন্নতা, দরপত্র ও পদোন্নতিতে অনিয়ম, নালা
দখলসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৬৯টি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। অভিযোগগুলো আগে দুদকে
জমা দেন সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে দুদক ও মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, চট্টগ্রাম এ শুনানির আয়োজন করে।
শুনানির আগে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দুদক কমিশনার আমিনুল
ইসলাম, সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত
বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামী ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ
সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম।
শুনানিতে আবদুল মতিন নামের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, সিটি
করপোরেশনের লেকসিটি প্রকল্পে প্লট দেওয়ার নামে ৩৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন
করপোরেশনের সার্কেল-৫–এর কর কর্মকর্তা (বর্তমানে বরখাস্ত) জানে আলম। যে
কাগজপত্র দিয়েছেন, তা ছিল জাল। পরে টাকাও ফেরত দেননি।
সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন অনিয়মের
অভিযোগে জানে আলমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে
পদক্ষেপ নিতে করপোরেশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেন দুদক কমিশনার আমিনুল ইসলাম।
গণশুনানিতে সিটি করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী শামসুল হুদা
ছিদ্দিকী অভিযোগ করেন, ট্রলি সংস্কার দেখিয়ে মেসার্স মাসুম এন্টারপ্রাইজের
নামে ভুয়া বিল তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক
প্রকৌশলী সুদীপ বসাক ও অন্যরা। এ ছাড়া সাগরিকায় নতুন অ্যাসফল্ট প্ল্যান্টে
১২৯ জন লোক নিয়োগ দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ৫০ টন ধারণ
ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ওয়ে ব্রিজ (গাড়িসহ মালামাল মাপক যন্ত্র) স্থাপন ও
সরবরাহের কাজ দিয়েছেন এক চাচাতো ভাইকে।
সুদীপ বসাক বলেন, সবকিছু নিয়ম-নীতি মেনে হয়েছে। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
শুনানিতে ডা. জাকির হোসেন সিটি করপোরেশন হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও
হাসপাতালের অধ্যক্ষ নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার
অপব্যবহারের অভিযোগ করেন এক ব্যক্তি।
সালামত মিয়া নামের লালখান বাজার ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা অভিযোগ
করেন, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ ওরফে মানিক মসজিদের জায়গায়
দোকান নির্মাণ, ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে টাকা এবং রেলওয়ের পাহাড়ি জমি দখল
করেছেন। শুনানিতে উপস্থিত থাকা কাউন্সিলর কবির আহমদ এসব অভিযোগ অস্বীকার
করেন। জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার।
টাকা না দিলে ময়লা অপসারণ করা হয় না বলে অভিযোগ করেন শুলকবহর
ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা। তবে তা অস্বীকার করেন প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা
শফিকুল মান্নান।
রাজস্ব বিভাগের বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্সে অতিরিক্ত টাকা আদায়,
হয়রানি এবং গৃহকর বৃদ্ধির ব্যাপারে অভিযোগ করেন একাধিক ব্যক্তি। তবে এসব
অভিযোগ অস্বীকার করেন করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। আর পতেঙ্গা,
আকবরশাহ, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় নালার ওপর স্থাপনা নির্মাণের কারণে
জলাবদ্ধতা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক ব্যক্তি।
এদিকে নগরের টাইগারপাস বস্তিবাসীর জন্য করা ভবনে করপোরেশনের
কার্যালয় করার বিষয়ে অভিযোগ দেন তিন বস্তিবাসী। তাঁরা বলেন, করপোরেশন
তাঁদের কাছ থেকে টাকা নিলেও ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়নি। এখন তাঁরা মানবেতর
জীবনযাপন করছেন।