বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়ন
হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের
সঙ্গে জনসনের এক ফোনালাপের পর এমনটি জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও
বৃটিশ সরকারের সদর দপ্তরের একটি সূত্র। সূত্র জানিয়েছে, ওই ফোনকলের পর এটা
নিশ্চিত যে, জনসনের ব্রেক্সিট চুক্তি কখনোই বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সূত্র আরো
জানিয়েছে, মার্কেলের সঙ্গে ফোনালাপ শেষে জনসন চুক্তিটি বাস্তবায়নের হাল
ছেড়ে দেবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়
চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের কৌশল প্রয়োগের দিকেই আগাবেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। এ
খবর দিয়েছে বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান। সোমবার এক ফোনালাপে জার্মান
চ্যান্সেলরের সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর কাছে নিজের প্রস্তাবিত
চুক্তিটি তুলে ধরেন জনসন। কিন্তু সূত্র জানিয়েছে, মার্কেল সাফ জানিয়ে
দিয়েছেন এই ইইউ তার এই চুক্তি মেনে নেয়ার সম্ভাবনা খুবই নগণ্য। সূত্রের দাবি, মার্কেল বলেছেন, চুক্তিতে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড (বৃটেনের
অংশ) ইইউ’র একক কাস্টমস ইউনিয়নের সদস্য থাকার বিষয় নিশ্চিত না হলে ইইউ এই
চুক্তি কখনোই মেনে নেবে না।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ইইউ’র কাছে নতুন
ব্রেক্সিট পরিকল্পনার প্রস্তাব পাঠান জনসন। ওই প্রস্তাবে নর্দার্ন
আয়ারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের (ইইউ’র অংশ) মধ্যকার ‘ব্যাকস্টপ’ পরিকল্পনা
পরিবর্তনের দিকে জোর দেয়া হয়। ব্যাকস্টপ পরিকল্পনাটি জনসনের পূর্বসূরি
তেরেসা মে’র সরকার প্রস্তাব করেছিল। যদি চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হয় তাহলে দুই
দেশের মধ্যে পণ্য আনা-নেয়ায় উভয় দেশের সীমান্তে কঠোর তল্লাশি ও কাস্টমস
আইনের প্রয়োগ এড়াতে ওই পরিকল্পনা করা হয়। জনসনের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা
অনুসারে, ২০২১ সাল পর্যন্ত ইইউ’র একক কাস্টমস ইউনিয়নের সদস্য থাকবে
নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। ২০২১ সালের দিকে বৃটেনের সঙ্গে ইইউ’র কাস্টমস ইউনিয়ন
ত্যাগ করবে দেশটি। তবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড চাইলে কাস্টমস ইউনিয়নে থাকার
জন্য ইইউ’র কাছে চুক্তির আবেদন করতে পারে। প্রতি চার বছর পর পর এই চুক্তি
নবায়ন করতে হবে।
এদিকে, বিরোধী দল লেবার পার্টি জানিয়েছে, জনসন ইইউ’র
সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে দেয়ার একটি অসাধু প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। ছায়া
ব্রেক্সিটমন্ত্রী স্যার কেইর স্টার্মার বলেন যে, জনসন কখনোই একটি
গ্রহণযোগ্য চুক্তি প্রস্তাব করে তার নিজের ব্যর্থতার দায় নেবেন না। তিনি
জনসন সরকারকে বেপরোয়া হিসেবে বর্ণনা করে পার্লামেন্টকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার
আহ্বান জানান।
জনসন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগ থেকেই ৩১শে
অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট কার্যকর করার প্রতি জোর দিয়ে আসছেন। প্রয়োজনে
চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। সমপ্রতি ব্রেক্সিট নিয়ে নিজের
পরিকল্পনায় ইইউ’র সম্মতি যোগাড়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। এই সপ্তাহের শুরু
থেকেই একাধিক ইইউ নেতার সঙ্গে ফোনে আলোচনা করেছেন তিনি। সর্বশেষ মার্কেলের
সঙ্গে আলোচনা শেষে তার প্রস্তাবিত চুক্তি বাস্তবায়ন অসম্ভব জানিয়েছে
সংশ্লিষ্ট সূত্র। তাই ধরা হচ্ছে, এখন চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পথে
হাঁটবেন তিনি। যদিও বৃটিশ পার্লামেন্ট তার চুক্তিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে
ইতিমধ্যে বিল পাস করেছে। ১৯শে অক্টোবরের মধ্যে বৃটিশ পার্লামেন্টের
সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য যদি চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের প্রতি সমর্থন না জানায় তাহলে
ইইউ’র কাছে ব্রেক্সিটের সময়সীমা পেছানোর অনুরোধ করতে বাধ্য হবেন তিনি। এর
আগে ১৭ই অক্টোবর অবশ্য ইউরোপীয় পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন রয়েছে। এই
সম্মেলনে ইইউ নেতাদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরবেন জনসন।