সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজানো হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। আগামী ডিসেম্বরে
জাতীয় সম্মেলনের আগেই আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের
সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ২ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর আওয়ামী
যুবলীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ২৩ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগের
সম্মেলনের প্রাথমিক তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতে চার দিনের সফরে যাওয়ার
আগের দিন রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত দিয়ে যান বলে দলের
একাধিক নীতিনির্ধারকসূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, গত বুধবার রাতে গণভবনে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে অনির্ধারিত
বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে দলকে
পরিশুদ্ধ করার তাগিদ দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দলে অনুপ্রবেশকারীদের
কারণেই আমার দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীরা মার খাচ্ছে। এদের খুঁজে
খুঁজে বের করে দিতে হবে।’ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের
সম্মেলনের পাশাপাশি জেলা, মহানগর ও উপজেলা সম্মেলন চলবে। দলকে আরও জনপ্রিয় ও
শক্তিশালী করতে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও অপকর্মকারীদের ছেঁটে ফেলা হবে।
একই সঙ্গে বের করে দেওয়া হবে বিএনপি-জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশকারীদেরও। ২০-২১
ডিসেম্বরের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ক্লিন ইমেজের পরীক্ষিত নেতারাই আসবেন
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা এমন কথাই বলছেন।
বুধবারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই
যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলনের তারিখ
ঠিক করে দেন। বৈঠকে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি
উচ্চারণ করেন তিনি। নেতাদের সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাউকে বাঁচানোর
জন্য তদবির করতে আসবেন না। কোনো অস্ত্রবাজ-চাঁদাবাজকে শেল্টার দেবেন না।
সবার আমলনামা আমার হাতে রয়েছে।’ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা
বলছেন, দলকে জনপ্রিয় করতে এবং ঢেলে সাজাতে এবার কঠোর হয়েছেন শেখ হাসিনা।
তিনি চান পরীক্ষিত ও দলের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ব্যক্তিরাই দলের রাজনীতিতে
সক্রিয় থাকুন। সে কারণে আগাছা-পরগাছা পরিষ্কার করতে দলের সম্মেলন করার
উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এজন্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ,
কৃষক লীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
সাংবাদিকদের বলেন, ‘৩০ নভেম্বরের মধ্যেই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক
লীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন হবে। নেত্রীর সঙ্গে আলাপকালে যা বুঝেছি,
তা হচ্ছে ক্লিন ইমেজ, উজ্জ্বল ভাবমূর্তি যার রয়েছে তারাই আওয়ামী লীগের
বিভিন্ন কমিটিতে আসবেন।’ নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগ সম্পাদকম লীর একজন
সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রাথমিক খসড়া অনুযায়ী ২ নভেম্বর কৃষক
লীগ, ৯ নভেম্বর যুবলীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ২৩ নভেম্বর জাতীয়
শ্রমিক লীগের সম্মেলন হবে। এটা খসড়া। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই উক্ত সময়ে
সংগঠনগুলোর সম্মেলন হবে।’ আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির
নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিন সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন
ছাড়াও জেলা-উপজেলা ও মহানগরের সম্মেলন ধারাবাহিকভাবে চলবে। আগামী তিন মাস
আমরা সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে চাই। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে
নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সে মোতাবেক কাজ শুরু করেছি।’ জানা যায়, আওয়ামী
লীগের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে শক্তিশালী সংগঠন হচ্ছে যুবলীগ। গঠনতন্ত্র
অনুযায়ী, তিন বছর পরপর যুবলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা। সংগঠনটির সর্বশেষ
সম্মেলন হয়েছে ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। আগামী ৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় যুবলীগের
কংগ্রেসের (সম্মেলন) তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে যুবলীগ
চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চলতি
মাসেই ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ও উত্তর যুবলীগের সম্মেলন করতে সংশ্লিষ্টদের
নির্দেশনা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার নির্ধারণ করা সময়েই কংগ্রেস (সম্মেলন) করতে আমরা প্রস্তুত।’ ২০১২
সালের ১১ জুলাই মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি ও পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ
সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ কমিটি হয়। সে কমিটি এখনো কাজ
চালিয়ে যাচ্ছে। একই অবস্থা জেলা-উপজেলাগুলোতেও। ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক
লীগের সম্মেলনের প্রাথমিক তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের
সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটি সংগঠনকে
শক্তিশালী ও গতিশীল করতে হয় সম্মেলনের মাধ্যমে। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে
শিক্ষিত, মেধাবী, সৎ ও জাতির পিতার আদর্শের তারুণ্য নেতৃত্বে প্রাধান্য
পাবে বলে মনে করি।’ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। এ
কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে। প্রায় চার বছর ধরে সম্মেলন
না হওয়ায় বর্তমান কমিটি দিয়েই অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কৃষক লীগের
কার্যক্রম। এ প্রসঙ্গে কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ মোহাম্মদ
জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংগঠনের সভাপতি মোতাহার হোসেন
মোল্লা সাংগঠনিক কাজে বিদেশ সফরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলেই আওয়ামী লীগ
সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। তাঁর দিকনির্দেশনা নিয়েই আমরা
সম্মেলনের প্রস্তুতি নেব।’ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক
লীগ। সাংগঠনিক অবস্থাও নড়বড়ে। ২০১২ সালে এ সংগঠনের সম্মেলন হয়। সভাপতি
শুক্কুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক
লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ পেরিয়েছে অনেক আগে। এ প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক
মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা গত বছর সম্মেলনের
প্রস্তুতি শুরু করেছি। আগেই কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং করে সম্মেলনের তারিখ
নির্ধারণের জন্য আওয়ামী লীগের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। দল যখনই সময় নির্ধারণ
করেছে, তখনই সম্মেলন করব।’