সালমান শাহ অভিনয় করতেন না। রক্ত–মাংসের একজন মানুষ, যেন হাওয়া হয়ে ঢুকে
পড়তেন একেকটি চরিত্রের ভেতরে। মাত্র ২৭টি ছবির প্রতিটিতে দর্শক আজও যাঁকে
মুগ্ধ হয়ে দেখেন, সেই সালমান শাহর আজ ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। অথচ আজও তিনি
যেকোনো জীবিত নায়কের থেকেও জনপ্রিয়।
শুটিং
সেটে আসার আগে সালমান যেন নিজেকে বাড়িতে রেখে আসতেন। চরিত্রের জন্য
প্রস্তুত হওয়ার সময় নিতেন। পরিচালকের কাছ থেকে গভীরভাবে শুনে দৃশ্যের জন্য
মন ঠিক করে নিতেন। তারপর ক্যামেরার সামনে বদলে যেতেন। সত্যের মৃত্যু নেই
ছবির জয়কে যখন ফাঁসিকাষ্ঠে চড়ানো হলো, তখনকার অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন
পরিচালক ছটকু আহমেদ। ‘কথা ছিল তাঁর মাথাটা কেবল ঢেকে দেওয়া হবে কালো কাপড়ে।
সালমান বেঁকে বসলেন। বললেন, “আমার হাত–পা বেঁধে দিন। হাত–পা বাঁধা না
থাকলে আসামিকে আসামি মনে হয় না।”’ পরিচালকের ভাবনাকে বদলে দিলেন সালমান। এ
ঘটনায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ছিলেন পরিচালক। কিন্তু সালমান ছিলেন সেসব ভাবনার
ঊর্ধ্বে।
কেন আলাদা সালমান? ছটকু আহমেদ বলেন, ‘নিজের চরিত্রের পোশাক, স্টাইলটা সে
নিজে তৈরি করতে জানত। সময় নিয়ে চরিত্র বুঝত। এখনকার অভিনয়শিল্পীদের বেশির
ভাগই সেটা করে না। তাঁদের শুধুই তাড়া। না বুঝেই এরা বুঝে ফেলার ভান করে,
সেটার প্রভাব দেখা যায় সিনেমায়।’
সিনেমায় সালমানের প্রথম নায়িকা মৌসুমী,
প্রথম পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। একজন বন্ধু, অন্যজন গুরু। গুরু মনে
করেন, ঈশ্বরদত্ত গুণ ছিল সালমানের। যে চরিত্র তাঁকে দেওয়া হতো, মনে হতো
চরিত্রটা তাঁর জন্যই তৈরি। তিনি বলেন, ‘এখনকার অভিনেতাদের মধ্যে অভিনয়
“করা”র প্রবণতা আছে, সালমানের মধ্যে চরিত্রে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল।
সালমানকে লোকে আজও মনে রেখেছে, সেটার মূল কারণ এটাই।’
বন্ধুকে স্মরণ করে মৌসুমী বললেন, ‘সালমান কখনো বড় হয়নি। তাঁর সবকিছুই
ছিল আলাদা। যখন রাগ করত, ভীষণ রিঅ্যাক্ট করত। রাগ পড়ে গেলে যেন জীবনটাই
দিয়ে দিতে পারত বন্ধুর জন্য। বাস্তব জীবনে সে ছিল পর্দার মতোই রোমান্টিক।’
ব্যতিক্রম
আর কী দেখেছেন তাঁর ভেতরে, তাঁর নায়িকারা? প্রথমবার আঞ্জুমান ছবিতে তাঁর
নায়িকা হয়েছিলেন শাবনাজ। প্রায় সমবয়সী হওয়ার কারণে হাসি–ঠাট্টা আর রসিকতা
খুব বেশি হতো সালমান–শাবনাজের। ভীষণ আন্তরিক, স্মার্ট আর পরোপকারী সালমান
কাউকে আঘাত করতেন না। সবার মুখে একটা মুচকি হাসি ফুটিয়ে দিতে পারতেন তিনি।
সহকর্মীকে মনে করে কথাগুলো বললেন শাবনাজ।
তুমি আমার ছবির মধ্য দিয়ে বাংলা সিনেমায় আসেন সালমান–শাবনূর জুটি। তারপর
থেকে এ জুটির প্রায় সব ছবিই হিট করে। এত দিন পর প্রিয় সেই সহকর্মীকে
কীভাবে স্মরণ করলেন তিনি? শাবনূর বললেন, ‘কেবল শিল্পী হিসেবে নয়, মানুষ
হিসেবেও বড় ছিল সালমান। বড়দের সম্মান আর ছোটদের ভীষণ আদর করত সে। একসঙ্গে
অনেক কাজ করার কারণে আমাদের বোঝাপড়াটা ছিল চমত্কার। তাঁর মতো এত ভালো বন্ধু
কেউ হয় না কখনো।’
পরিচালক ছটকু আহমেদ আরও বলেন, ‘ভীষণ জনপ্রিয় ছিল
সালমান। সে কারণে তার পরে যারা ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে, তারা সালমান হওয়ার
জন্যই এসেছিল। কিন্তু পায়ের নিচে সামান্য মাটি পেয়ে গেলেই তারা বদলে গেছে।
তাদের অনেকেই দর্শককে ফাঁকি দিয়েছে, দর্শকও তাই তাদের ফাঁকি দিচ্ছে। তবে
সালমানকে ঠিকই মনে রেখেছে, রাখবে।’